রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত -দলিল সহ জানুন ৩০ রোজার ফজিলত
আপনি যদি রোজা সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত এবং দলিল সহ ৩০ টি রোজা রাখার ফজিলত
সম্পর্কে জানতে চান তবে এই আর্টিকেল মন দিয়ে পড়ুন। কেননা আজকের এই
আর্টিকেলে আমরা এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
একজন মুসলমান হিসেবে রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও দলিল সহ ৩০ রোজার ফজিলত
আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরি। কেননা রোজার মাধ্যমে একজন মুসলমানের ঈমানের
পরীক্ষা নেওয়া হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাহলে চলুন রোজা সম্পর্কে আয়াত ও ৩০
রোজার ফজিলত জেনে নিই।
পোস্ট সূচীপত্রঃ রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও দলিল সহ ৩০ রোজার ফজিলত
রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
রমজান মাস হচ্ছে আমাদের মত প্রত্যেকটি মুসলমানদের জন্য একটি আত্মশুদ্ধির
মাস। যে মাসে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়ার পথে পরিচালিত
হই। শুধু তাই নয়, এই পবিত্র মাসে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য তার
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দরজা খুলে দেন। তাই
মুসলমান হিসেবে এই পবিত্র রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত আমাদের জানা উচিত। তবে
চলুন আর বেশি দেরি না করে রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াতের সাথে আমরা পরিচিত হয়ে
নিই।
১। আয়াতঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا
كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ
تَتَّقُونَ
উচ্চারণঃ
ইয়া আইয়ুহাল্লাযিনা আমানু কুতিবা আলায়কুমুস-সিয়ামা কামা কুতিবা
আলাল্লাজিনা মিন কবলিকুম লাল্লাকুম তাত্তাকুন।
বাংলা অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজা ফরজ
করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা
তাকওয়া অর্জন করতে পারো। ( সূরা আল-বাকারা, আয়াতঃ ১৮৩ )
২। আয়াতঃ شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ
وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ
الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
উচ্চারণঃ
সাহ্রু রামাদানাল্লাজিনা উংঝিলা ফিহিল-কুরআনু হুদাল্লিন-নাসি
ওয়াবায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকন, ফামান সাহিদা মিনকুমুশ-শাহ্রা
ফালইয়াশুমহু ।
বাংলা অর্থঃ রমজান হলো সেই মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা
মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সঠিক পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার
পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে, সে যেন রোজা
রাখে।
৩০ রোজার ফজিলত দলিল সহ
প্রতিটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ৩০ টি
রোজা যেমন ফরজ করেছেন, ঠিক তেমনি প্রতিটি রোজার জন্য মহান রব্বুল আল-আমিন বিশেষ
পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। তাই একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই আমাদের
৩০ টি রোজার ফজিলত জানা উচিত। এখন আমরা ৩০ রোজার ফজিলত দলিলসহ খুব সুন্দরভাবে
জানতে পারবো।
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন...
আদম সন্তানদের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হবে। তাদের একটি দিকের
বিনিময়ে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত সওয়াব দেওয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা
বলেন, রোজা ব্যতিক্রম।কেননা এ রোজা আমার জন্য, সুতরাং এর প্রতিদান আমি
নিজেই দেব। কারণ, আমার বান্দা আমার জন্য তার খাদ্য, পানিও এবং
প্রবৃত্তিকে ত্যাগ করে। (সহিহ বুখারি ১৯০৪, সহিহ মুসলিম ১১৫১)
আমরা উপরোক্ত হাদিস থেকে এটাই বুঝতে পারি যে, রমজান মাসে আমাদের রোজা রাখার
প্রতিদান আল্লাহ নিজের হাতে দেবেন। পাশাপাশি এর সওয়াব তো
অফুরন্ত। আমরা যদি ৩০ টি রোজার মধ্যে ৩০ টিই রাখতে পারি তবে আল্লাহ
তা'আলা আমাদেরকে বিশেষ পুরষ্কার দেওয়ার প্রতিদান দিয়েছেন।
অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন...
জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা রয়েছে। যেটার নাম হচ্ছে
'আর-রাইয়ান'। কিয়ামতের দিন শুধুমাত্র রোজাদাররাই এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে
পারবে। তারা ব্যতীত আর কাউকে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
(সহিহ বুখারি ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম ১১৫২)
অর্থাৎ এই হাদিস থেকে আমরা বুঝলাম, রমজানের ৩০ টি রোজা যদি আমরা সঠিকভাবে
পালন করতে পারি তাহলে এই দরজা দিয়ে আমরা কিয়ামতের দিন জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবো।
আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন...
যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের ৩০ টি রোজা পালন করবে, তবে আল্লাহ পাক
তার পূর্বের জীবনের সমস্ত গুনাহগুলো মাফ করে দিবেন। (সহিহ বুখারি ২০১৪, সহিহ
মুসলিম ৭৬০)
অর্থাৎ আমরা যদি রমজানের ৩০ টি রোজা রাখতে পারে তাহলে আমাদের পূর্ববর্তী ছোটখাটো
যাবতীয় প্রদান আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করে দেবেন।
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন...
যে ব্যক্তি একাধারে রমজানের ৩০ টি রোজা রাখে এবং পরবর্তী শাওয়াল মাসের
ছয়টি রোজা পালন করে, সে ব্যক্তি পুরো বছরের রোজা রাখার সওয়াব পায়। (সহিহ
মুসলিম ১১৬৪)
অর্থাৎ আমরা যদি রমজানের ৩০ টি রোজা পালনের পাশাপাশি শাওয়াল মাসে ৬ টি রোজা
পালন করে তাহলে আল্লাহ পাক আমাদেরকে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব দান
করবেন।
এছাড়াও আমরা যদি কোরআনের একটি বিশেষ আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি তবে আমাদের
কাছে একটি আরও বেশি স্পষ্ট হবে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেন...
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপরে রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা
হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
(সুরা আল-বাকারা আয়াত ১৮৩)
এ সমস্ত সহি হাদিস এবং কোরআনের আয়াত থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম
যে, রমজানের ৩০ টি রোজা আমাদের জন্য কতটা ফজিলতপূর্ণ। আমরা যদি এই ৩০ টে
রোজা সঠিকভাবে পালন করতে পারে তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ
পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে রমজানের এই ৩০ টি রোজা
সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন।
রমজানের প্রথম রোজার ফজিলত
রমজান মাসে প্রথম রোজা আমাদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কেননা এটি একটি
শ্রেষ্ঠ মাসের শুরু। যার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক প্রচুর পরিমাণে রহমত ও বরকত
বর্ষিত করেন। পাশাপাশি রমজানের এই প্রথম রোজায় আল্লাহপাক জান্নাতের সমস্ত
দরজা খুলে দেন এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন। চলুন রমজানের প্রথম
রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা গুলো রাখবে, তার পূর্ববর্তী
গুনাহ গুলো মাফ করা হবে। পাশাপাশি আরও একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম রোজা রাখার মাধ্যমে
বান্দারা তাকওয়ার পথে প্রথম ধাপ নেই, যা মুমিনদের জন্য জান্নাতের অন্যতম
চাবিকাঠি।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রোজার ফজিলত সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে, যেখানে রোজাদারদের জন্য
আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার, মর্যাদা এবং ফজিলতের কথা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন। চলুন রোজার ফজিলত
সম্পর্কে সহিহ কিছু হাদিস জেনে নিই।
১।
আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন...
রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার জন্য একটি ঢালস্বরূপ, যেখানে ঢাল যুদ্ধের
সময় আমাদের রক্ষা করে। (সহিহ বুখারি ১৮৯৪, সহিহ মুসলিম ১১৫১) । এই হাদিস
থেকে আমরা বুঝলাম, আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রোজা
অন্যতম প্রধান উপায়।
২। রোজার ফজিলত এতটাই বেশি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন...
রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। (সহিহ
বুখারি ১৮৯৪, সহিহ মুসলিম ১১৫১)। অর্থাৎ রোজা রাখার ফলে আমাদের মুখে যেই
গন্ধটা হবে সেই গন্ধটাও মিশকের গন্ধের চাইতেও উত্তম আল্লাহ পাকের
কাছে।
৩। অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন...
রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। প্রথমত, যখন সে ইফতার করে, তখন সে
আনন্দ দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন
সে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারি ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম ১১৫১)। অর্থাৎ আমাদের
রোজাদারদের জন্য দুনিয়াতে ইফতারি করার সময় আনন্দ এবং জান্নাতে আল্লাহর সাথে
সাক্ষাৎকারের আনন্দ, এই দুটি পুরস্কার রয়েছে।
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা
রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেমন আমাদের ওপরে রহমত বর্ষিত
হয়, ঠিক তেমনি রমজানের রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু
উপকার সাধিত হয়। আর বর্তমান সময়ে আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারাও প্রমানিত
হয়েছে যে, রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন
কার্যপ্রতিক্রিয়ায় এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। চলুন বিস্তারিত জেনে
নিই।
- রমজানের রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থ গুলো দূরীভূত হয়।
- রোজা পালন করার ফলে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের শরীর থেকে ডায়াবেটিকস এর ঝুঁকি কমায়।
- নিয়মিত রমজানের রোজা পালন করার ফলে আমাদের শরীর থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়, যা আমাদের হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- রোজা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি আমাদের ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে থাকে।
- এছাড়াও নিয়মিত রোজা রাখার ফলে আমাদের হার্ট অ্যাটাক, স্টক এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
- রোজা আমাদের মস্তিষ্কের নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে থাকে।
- নিয়মিত রোজা রাখার ফলে আমাদের বিভিন্ন রকমের ডিপ্রেশন কমে যায়। যেটা আমাদের মানসিক শান্তি প্রদান করে।
- রোজা থাকার ফলে সারাদিন আমরা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকি। যার কারণে আমাদের পচনতন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- নিয়মিত রোজা রাখার ফলে আমাদের লিভারের ফাংশন উন্নতি হয় এবং ফ্যাটি লিভার এটি প্রতিরোধ করে।
- রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরে সাদা রক্ত কণিকা বৃদ্ধি পায়। যেটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- রমজান মানে নিয়মিত রোজা রাখার ফলে এটি আমাদের শরীর থেকে বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধ করে দেয়। যেটা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল এবং মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল
রমজানের প্রথম ১০ দিন হলো রহমতের এবং দ্বিতীয় ১০ দিন হলো মাগফিরাতের। আর এর
রহমতের ও মাগফিরাতের ১০ দিনে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো আমাদের জানা উচিত।
কেননা এই ২০ দিন যদি আমরা বেশি বেশি নেক আমল করতে পারি তাহলে আল্লাহর রহমত ও
মাগফিরাত আমরা অধিক পরিমাণে অর্জন করতে পারব। চলুন রমজানের প্রথম ও
দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল সম্পর্কে জানি।
- সর্বদা বেশি বেশি তাওবা করা। নিজের জীবনের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি আমাদের ইস্তেগফার পড়তে হবে।
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুব গুরুত্তের সাথে পড়া। বিশেষ করে আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি তাহাজ্জুত, নফল, সুন্নত ইত্যাদি নামাজ বেশি বেশি পড়তে হবে আল্লাহর অধিক রহমত লাভের আশায়।
- এর মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। বিশেষ করে এই ২০ দিন আমরা বেশি পরিমানে কুরআন পড়তে পারলে আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে যেতে পারবো এবং মাগফিতার পাবো।
- এই মাসে বিশেষ করে প্রথম ১০ দিন আমাদের বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়তে হবে। এছাড়াও বেশি বেশি জিকির করা উচিত। এতে করে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে এবং মাগফিরাত পাওয়া যাবে।
- রমজানের প্রথম দশ দিন ও দ্বিতীয় ১০ দিন আমাদের অধিক পরিমাণে দান সদকা করা উচিত। এতে করে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করা যায়।
- রোজার ফজিলত দিয়ে সব সময় আমাদের চিন্তা করতে হবে এবং পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটাতে হবে। কেননা রমজান মাসের এটাও একটা আমল।
-
রমজান মাসে বেশি বেশি আমাদের রমজানের দোয়া পাঠ করতে হবে।
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল
রমজানের প্রথম এবং দ্বিতীয় দশ দিনের আমলের চাইতে শেষ ১০ দিনের
আমল সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। কেননা এই দশ দিনের আমলে আল্লাহ পাক
অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় এবং তাকওয়াবান বানিয়ে
দেন। তাই আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশ দিন একটু বেশি পরিমাণে আমল করা
এবং লাইলাতুল কদরের তালাশ করা। শেষ ১০ দিন যেসব আমল বেশি করবেন...
- রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ পালন করা। এ আমলটি আমাদের জন্য সর্বোত্তম একটি সুন্নতি আমল। ইতিকাফ আমল হচ্ছে, রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে থেকে ইবাদত করা এবং দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা ও ব্যস্ততা বাদ দিয়ে এক আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা।
- ইতিকাফে থাকা অবস্থায় বেশি বেশি নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। পাশাপাশি বেশি বেশি তওবা পাঠ, লাইলাতুল কদরের তালাশ এবং দোয়া ও জিকির করতে পারেন।
- লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাত। যে মাসে ইবাদত করলে হাজার মাস ইবাদত করার মত সওয়াব পাওয়া যায়। তাই রমজানের শেষ দশকে এ রাত তালাশ করুন এবং ইবাদতে মগ্ন থাকুন।
-
রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের দোয়া বেশি বেশি পড়া উচিত। তাই
সেই দোয়া বেশি বেশি পড়ুন। দোয়াটি হলো, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু
আন্নি।
- প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের তুলনায় রমজানের শেষ দশকে তাহাজ্জুদ নামাজ এবং অন্যান্য নফল নামাজ অধিক পরিমাণে পড়া উচিত। এসময় আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে দ্রুত ক্ষমা করে দেন।
- যেহেতু রমজান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, সেহেতু কোরআন পাঠ করুন। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশ দিন কুরআনের সাথে এক মধুর সম্পর্ক তৈরি করুন।
- কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আরও বেশি সওয়াব পাবেন।
- রমজানের এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে নিজের ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কেননা ইস্তেগফার পড়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ মাফ করে দেন।
- রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের তুলনায় শেষ দশকে একটু বেশি দান করুন। কেননা শেষ দশ দিনে দান করা সর্বোত্তম একটি আমল। তাই গরিব, মিসকিন, মাদ্রাসা, মসজিদ অথবা অসহায় এতিমদের মাঝে বেশি বেশি দান করুন।
- বিভিন্ন রকমের গীবত বা মিথ্যাচার করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা রোজা থাকা অবস্থায় যদি কারো সম্পর্কে গীবত কিবা মিথ্যাচার করে তাহলে আপনার রোজা কখনোই কবুল নাও হতে পারে।
- রমজানের শেষ দশকে বিদায়ী রমজানের দোয়া পড়ুন এইভাবে, হে আল্লাহ! আমার ইবাদত কবুল করুন। আবার রমজানের পৌঁছানোর তৌফিক দিন।
রোজা ও তাকওয়া অর্জন
রমজান মাস আমাদের আত্মশুদ্ধির একটি মাস। যে মাসে শুধুমাত্র ক্ষুধা ও
পিপাসা সহ্য করাই আমাদের কাজ নয়, বরং এই মাসে আমাদেরকে আল্লাহ ভীতি
অর্জন করতে হবে। আর এই মাস তাকওয়া অর্জন করার সর্বোচ্চ সুযোগ। কেননা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন...
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজা , ফরজ করা
হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা
তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারো।
উপরোক্ত এই আয়াত থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে
তাকওয়া অর্জন করা। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্ষুধা, পিপাসা এবং
দুনিয়ার যাবতীয় আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রিত করতে শিখি। যেটা আমাদের তাকওয়ার
মূল ভিত্তি।এছাড়াও রোজা থাকার মাধ্যমে
সারাদিন আমরা না খেয়ে থাকি। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে সন্ধ্যার সময় ইফতারি
করি। যেটা আমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য শিখায়। রোজা এমন একটি ইবাদত যেটা
কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন, আমরা ইচ্ছে করলেই গোপনে খেতে
পারি। কিন্তু আল্লাহর ভয় আমাদের মধ্যে থাকার জন্য আমরা খাই না। আর
এটাই হচ্ছে তাকওয়া। যেটা রোজা রাখার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারলেন রোজা
সম্পর্কে কুরআনের আয়াত এবং দলিলসহ ৩০ টি রোজার ফজিলত। এছাড়াও আপনি
জেনেছেন রোজা রাখা সম্পর্কিত সহিহ হাদিস এবং রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরে কি কি
উপকার সাধিত হয় এইসব বিষয় সম্পর্কে। রোজা যেমন আমাদের ধর্মীয় উৎপাদন
ঠিক তেমনি এটি আমাদের
দৈনন্দিন জীবনের পাপ মোচনের একটি সুযোগ। তাই আমাদের উচিত রমজানের ৩০ টি
রোজা সঠিকভাবে পালন করা।পাশাপাশি রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও ৩০ রোজার
ফজিলত জানা। কেননা একজন মুসলমান হিসেবে এটি জানা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে
পড়ে। আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চান তাহলে এই
ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো
করুন।
হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url