চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার -৮ টি কার্যকারী উপায় জানুন

কারি পাতা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় এটা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আপনি যদি জানতে চান চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে তবে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আজকে আপনি জানবেন চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার ও ৮ টি কার্যকরী উপায়। 
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
আমরা প্রায় সবাই চুলের যত্নে বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু চুলের যত্নে কারি পাতা কতটা কার্যকরী এটি জানলে হয়তো আপনি অবাক হয়ে যাবেন। তবে চলুন বেশি দেরি না করে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই।  

পোষ্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার -৮ টি কার্যকরী উপায় জানুন

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারে ৮ টি কার্যকরী উপায় 

আমাদের চুলের যত্নে কারি পাতার এক অনন্য ভূমিকা রয়েছে। যেটা ব্যবহার করার ফলে আমাদের চুলের শুষ্কতা দূর হয় এবং চুলকে মসৃণ করে। পাশাপাশি এই কারি পাতা আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করে। তবে এর কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে, যার মাধ্যমে এইসকল উপকার সাধন হয়। তবে চলুন জেনে নিই কারী পাতার ৮ টি কার্যকারী উপায় সম্পর্কে। 

  • কারি পাতার অয়েলঃ আমাদের চুলে কারি পাতার তেল অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারি পাতার তেল ব্যবহার করার ফলে এটি আমাদের চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়, চুলকে ঘন এবং মজবুত করে তোলে। কারি পাতার তেল যেভাবে তৈরি করবেন, এক মুঠো কারি পাতা নারিকেল তেলের সাথে ফুটিয়ে পরবর্তীতে সেটা ঠান্ডা করে চুলে লাগাতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ বার এটি লাগালেই হবে। 
  • চুলের জন্য কারি পাতার মাস্কঃ কারি পাতার মাস্ক তৈরি করে যদি আমাদের চুলে ব্যবহার করা হয় তবে এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে আমাদের চুলকে নরম এবং মসৃণ করে তুলবে। কারি পাতার মাস্ক যেভাবে তৈরি করবেন, কিছু কারি পাতা এবং এর সাথে দই ও মধু একসাথে ব্লেন্ড করে চুলে লাগাতে হবে। ৩০-৪০ মিনিট পরে সেটা ধুয়ে ফেলতে পারেন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
  • কারি পাতার রস ব্যবহারঃ কারি পাতার তেল ব্যবহার করার ফলে যেমন আমাদের চুল মজবুত এবং বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনি এর রস আমাদের চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।কারি পাতার রস সংগ্রহের জন্য কিছু পাতা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। অতঃপর এটি আমাদের চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • কারি পাতা ও মেথির প্যাকঃ আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করার জন্য কারি পাতা ও মেথির প্যাক অত্যন্ত কার্যকরী। কারি পাতা ও মেথি একসাথে ব্লেন্ড করে আমাদের চুলে লাগালে এটি চুল পড়া কমায় ও গোরা মজবুত করে। এটি আমাদের চুলে লাগিয়ে ৪০ মিনিটের মত রাখলেই যথেষ্ট। আপনি চাইলে সপ্তাহে ২-৩ দিন এই প্রক্রিয়ায় চুলে লাগাতে পারেন। 
  • কারি পাতা ও অলিভ অয়েলঃ আমরা যদি অলিভ অয়েল এর সাথে কারি পাতার রস মিশ্রণ করে আমাদের চুলে লাগায় তবে সেটা আমাদের চুলের রুক্ষতা দূর করার পাশাপাশি চুলে ডিপ হাইড্রেশন এনে দেবে। তার জন্য শুরুতে কারি পাতার সাথে অলিভ অয়েল ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপরে রাতে হালকা গরম তেল চুলে মালিশ করে পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে আমাদের পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • কারি পাতা ও চাল ধোয়া পানিঃ চাল ধোয়া পানিতে কিছু প্রাকৃতিক প্রোটিন থাকে যেটা কারি পাতার সাথে মিশিয়ে যদি আমরা আমাদের চুলে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করি তবে আমাদের চুল শাইন হবে। অর্থাৎ চুল মজবুত এবং চকচকে ও আকর্ষণীয় হবে। তার জন্য আমাদের যা করতে হবে, কিছু কারি পাতা চাল ধোয়া পানিতে সারারাত ভিজে রেখে পরের দিন সকালে চুলে স্প্রে করতে হবে। অতঃপর ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললেই হবে। 
  • কারি পাতা ও পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের রস আমাদের চুলের জন্য কার্যকরী এটা আমরা অনেকেই জানি। তবে সে পেঁয়াজের রসের সাথে যদি আমরা কারি পাতা ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাবে। এর জন্য আমাদের শুরুতেই কারি পাতার সাথে পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে নিতে হবে। সেটা কমপ্লিট হলে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললেই হবে। 
  • কারি পাতা ও মাটি মাস্কঃ আমাদের মাথা থেকে অতিরিক্ত তেল দূর করতে কারি পাতার সাথে মুলতানি মাটি মাস্ক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এটি আমাদের চুলে পুষ্টির যোগান দেয়। এটি যেভাবে ব্যবহার করবেন, কারি পাতার পেস্ট ও মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে আমাদের চুলের গোড়ায় লাগানোর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। 

কারি পাতা কি এবং এটি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ কেন

কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের এটা জানতে হবে কারি পাতা আসলে কি এবং এটি কেন ব্যবহার করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারি পাতা হচ্ছে এমন এক ধরনের সুগন্ধিযুক্ত পাতা যেটা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় মূলত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। একে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় কারণ খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ বৃদ্ধি করতে কারি পাতা অতুলনীয়।  

কারি পাতা ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি যেমন আমাদের খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে ঠিক তেমনি চুলের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারি পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আইরন, ফসফরাস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি রয়েছে যেটা আমাদের শরীর ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। আর চুলের যত্নে এটা কি রকম ভূমিকা পালন করে সেটা আপনি ইতোমধ্যে জেনেছেন। এছাড়াও 

কারি পাতা আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে উন্নত করে থাকে। এর পাশাপাশি এটি আমাদের ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমানোর জন্য অধিক কার্যকরী একটি পাতা। যেটি নিয়মিত ও পরিমিত বিভিন্নভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের উপকৃত করে থাকে। 

ঘরোয়া ভাবে কারি পাতার তেল তৈরি পদ্ধতি

কারি পাতার তেল যে আমাদের চুলকে ঘন ও শক্তিশালী করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এটা আমরা খুব ভালোভাবে জেনে গেছি। এছাড়াও আমাদের চুলকে নরম ও মসৃণ এবং চুলের রুক্ষতা দূর করতে এটি কতটা কার্যকরী আমরা এটাও জেনেছি। 
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
কিন্তু ঘরোয়া ভাবে এ কারি পাতার তেল কিভাবে তৈরি করা যায় এটা কি আমরা জানি? চলুন তাহলে নিচে খুব সুন্দর ভাবে জেনে নিই।

  • প্রথমে আমাদের একমুঠো তাজা কারি পাতা সংগ্রহ করে সেটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • এরপরে সে পাতাগুলো এমন ভাবে রোদে শুকাতে হবে যেন কোন রকমের পানি এতে না থাকে।
  • এরপরে পাতাগুলো শুকিয়ে গেলে সেগুলো ব্লেন্ড করে কিংবা হাতে খুব সুন্দর করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। 
  • অতঃপর নারিকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে নিতে হবে। 
  • এসব তেল গরম হয়ে গেলে কারি পাতার গুঁড়ো এবং সাথে কিছু মেথি ও কালোজিরা একসাথে মিশ্রণ করে নিতে হবে। 
  • চুল পড়া কমাতে এবং চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার করা উত্তম। 
  • এরপরে পাতাগুলো যখন কালো হয়ে যাবে এবং তেলে বুদবুদ করে উঠবে তখন গ্যাস অথবা তাপ দেওয়া বন্ধ করে দিন। 
  • সবশেষে তিনটি সুন্দরভাবে ঠান্ডা করে নিয়ে কোন পাত্রে অথবা বোতলের সংগ্রহ করুন এবং সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার করতে পারেন। 

ঘরোয়া ভাবে কারি পাতার মাস্ক তৈরির পদ্ধতি 

কারি পাতার তেল তৈরির পদ্ধতি যেমন আমাদের জানা উচিত ঠিক তেমনি কারি পাতার মাস্ক কিভাবে তৈরি করতে হয় এটা জানাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমরা যদি নিয়মিত আমাদের মাথায় কারি পাতার মাস্ক ব্যবহার করি তবে এটি আমাদের চুলকে নরম এবং মসৃণ করে তুলতে পারে। তবে চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই ঘরোয়া ভাবে কারি পাতার মাস্ক তৈরীর পদ্ধতি।  

  • মাস্ক তৈরি করার জন্য এক মুঠো কারি পাতা সংগ্রহ করে সেটি ব্লেন্ডারে সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। 
  • এরপরে ২-৩ চামচ দই এবং মধু তার মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। (এটি আমাদের চুলকে নরম ও মসৃণ করে তুলবে)। 
  • এর সাথে নারিকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল দিতে পারেন।  
  • এ সকল উপাদান দিয়ে খুব ভালোভাবে মিশ্রণ করে সেটা চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। 
  • এরপরে মাথায় ৩০-৪০ মিনিট এটা রেখে ঠান্ডা পানি অথবা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

কারি পাতার অসাধারণ কিছু কার্যকারিতা 

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার কিভাবে করা হয় এবং উপকার কি সে সম্পর্কে আমরা জানলাম।এছাড়াও রান্নার কাজে যে কারি পাতা ব্যবহার করা হয় সেটা আমরা পূর্বে থেকে জানি। তবে কারি পাতা আরো বিশেষ কিছু কাজে প্রয়োজন হয়। যেটা আমাদের সকলেরই জানা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নিই কারি পাতা আর কি কি কাজে লাগে। সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয় জানুন। 

  • আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কারি পাতার ভূমিকা ব্যাপক। কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ। যার ফলে আমরা যদি প্রতিনিয়ত কারি পাতা চিবিয়ে খাই তবে এটি আমাদের চোখের সুস্থতা এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। 
  • আমরা যদি আমাদের চুলের পাকা ভাব দূর করতে চাই এবং চুলের আসল রং দীর্ঘক্ষণ যাবত ধরে রাখতে চাই তবে কারি পাতাকে হেয়ার ডাই হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারি পাতার সাথে যদি একটু আমলকি মিশিয়ে এতে চুলে লাগানো যায় তবে এরকম উপকার পাওয়া যেতে পারে। 
  • কারি পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও নিউরো প্রটেকটিভ উপাদান আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই আমাদের খাবারে সাথে কিংবা চিবিয়ে কারি পাতা খাওয়া উচিত বলে মনে করি। 
  • কারি পাতা খাবার ফলে এর নির্যাস আমাদের দেহের টক্সিন দূর করে এবং লিভার পরিষ্কার করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় কারি পাতা আমাদের দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণে একটি অধিক কার্যকরী পাতা। 
  • আমাদের শরীরে কোথাও লালচে ভাব কিংবা মশার কামড়ের দাগ ফুটে ওঠে তবে সেখানে কারি পাতার পেস্ট লাগিয়ে দিলে সেটা কমে যেতে পারে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম। 
  • আমাদের শরীরে যদি ঘামের সৃষ্টি হয় এবং তার জন্য যদি দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে কারি পাতার পেস্ট এবং গোলাপজাম একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে সে গন্ধ দূর হয়ে যেতে পারে। তাই বলা যায় কারি পাতা দুর্গন্ধ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

চুলের যত্নে কোন সময় কারি পাতা ব্যবহার করা উচিত

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার এবং কিভাবে কারি পাতার পেস্ট তৈরি করতে হয় এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তবে এসবের সাথে আমাদের আরও একটি বিষয় জানতে হবে সেটি হচ্ছে আমাদের চুলের যত্নে কোন সময় কারি পাতা ব্যবহার করা উচিত। তাহলে চলুন এখন জেনে নিই কোন সময় কারি পাতা ব্যবহার করলে সেটি আমাদের চুলের জন্য পারফেক্ট হবে। 
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
সকালে খালি পেটে যদি আপনি ২-৩ টি কারি পাতা চিবিয়ে খান তবে এটি চুলের বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি কারি পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আইরন মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। এরপরে রাতে ঘুমানোর পূর্বে কারি পাতার তেল মাথায় লাগিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে সেটা পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন। এর ফলে 

আপনার চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং খুশকির সমস্যা দূর হতে পারে। আপনি যদি গোসল করার ৩০-৪০ মিনিট পূর্বে কারি পাতা ও দইয়ের মাস্ক বানিয়ে চুলে লাগান এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পরে ধুয়ে ফেলেন তাহলে আপনার চুলের শুষ্কতা দূর হয়ে চুল নরম এবং মসৃণ হয়ে উঠতে পারে। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করলেই যথেষ্ট হবে। 

কারি পাতা ব্যবহারে সতর্কতা 

কারি পাতা ব্যবহারে আমাদের অনেক উপকার সাধন হলেও এটি অতিরিক্ত ব্যবহারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। কেননা এর যেমন ভালো দিক রয়েছে ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহারে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই কারি পাতা ব্যবহার করবে এর সতর্কতা সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেই কারি পাতা ব্যবহারের কি কি সতর্কতা রয়েছে। 

  • প্রয়োজনের তুলনায় আমরা যদি অতিরিক্ত কারি পাতা চুলের যত্নের ব্যবহার করে ফেলি তাহলে এটি আমাদের চুলে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব তৈরি করতে পারে। তাই সপ্তাহে ২-৩ তিনবার এবং নিয়ম অনুযায়ী এটি ব্যবহার করা উচিত হবে বলে মনে করি। 
  • আমাদের মধ্যে কারো শরীরে যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কারি পাতার রস অথবা তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শুরুতে অল্প করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে সমস্যা হচ্ছে কিনা। নতুবা এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই উত্তম হবে। 
  • আমাদের মধ্যে কারো কারো শুষ্ক চুল আবার কারো তৈলাক্ত চুল। সেক্ষেত্রে কোন চুলের জন্য কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এটা আমাদের জানা উচিত। মূলত শুষ্ক চুলের জন্য কারি পাতার সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত হবে। আর তৈলাক্ত চুলের জন্য কারি পাতার সাথে অ্যালোভেরা বা দই মেশানো উচিত। পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয় জানুন। 
  • চুলের স্বাস্থ্য খুব তাড়াতাড়ি ভালো করতে অতিরিক্ত পরিমাণে যদি কারি পাতা আমরা গ্রহণ করি তবে এটি আমাদের হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে পেট ফাঁপা কিংবা ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রতিদিন ৫-৬ টি কারি পাতা চিবিয়ে খেলেই যথেষ্ট।  
  • বিশেষ করে কোন গর্ভবতী মা যদি কারি পাতা খেতে চাই সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম হবে বলে মনে করি। এছাড়াও আমরা যারা রক্তচাপের রোগী তাদের কারি পাতায় এড়িয়ে চলা উচিত হবে। কেননা যে কোন সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

কারি পাতা নিয়ে জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

কারি পাতা নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন রয়ে যায়। কিভাবে এটি চুলে ব্যবহার করবো, কিভাবে খাবো এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন যা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ভাবায়। তার জন্য আমরা গুগল এসে সার্চ করে থাকি। তাই চলুন জেনে নিই কারি পাতা নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন উত্তর। 

১। প্রশ্নঃ কারি পাতা চুলের জন্য কিভাবে উপকারী? 
উত্তরঃ কারি পাতা আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল পড়া কমিয়ে দেয়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে মসৃণ করে তোলে। 

২। প্রশ্নঃ কারি পাতার তেল কিভাবে তৈরি করব ঘরোয়া ভাবে? 
উত্তরঃ নারিকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল এর সাথে কারি পাতা ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপরে সেই তেলটি ঠান্ডা করে বোতলে কিংবা অন্য কোন পাত্রে সংগ্রহ করে নিতে হবে। 

৩। প্রশ্নঃ চুল কালো করতে কারি পাতা কিভাবে ব্যবহার করব? 
উত্তরঃ চুল কালো করার জন্য কারি পাতার তেল, কারি পাতা ও আমলকির পেস্ট কিংবা কারি পাতার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। 
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
৪। প্রশ্নঃ আমাদের চুল পড়া বন্ধ করতে কি করব? 
উত্তরঃ চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কারি পাতার তেল সপ্তাহে ২-৩ বার মাথায় লাগান। এছাড়াও খালি মুখে কারি পাতা চিবিয়ে খান এবং কারি পাতার পেস্ট তৈরি করে মাথায় ব্যবহার করুন। 

৫। প্রশ্নঃ কারি পাতা খেলে কি ওজন কমে? 
উত্তরঃ হ্যাঁ। প্রতিদিন এবং নিয়ম মত কারি পাতা খেলে এটি আমাদের ওজন কমিয়ে দিতে পারে। 

৬। প্রশ্নঃ ত্বকের যত্নে কারি পাতা কেমন কাজ করে? 
উত্তরঃ নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহারে এবং খাবার ফলে এটি আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করে দেয়।এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন রকমের দাগ কমিয়ে দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে দেয়। 

৭। প্রশ্নঃ কারি পাতা কতদিন ব্যবহার করলে ফল পাবো? 
উত্তরঃ নিয়ম অনুসারে আপনি যদি ৪-৬ সপ্তাহের মত কারি পাতা ব্যবহার করেন তবে এর মধ্যেই খুব ভালো ফলাফল পেয়ে যাবেন। 

আমাদের শেষ কথা

আপনি ইতোমধ্যে এই আর্টিকেল থেকে জানলেন চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার এর ৮ টি কার্যকরী উপায় সম্পর্কে। এছাড়াও ঘরোয়াভাবে কি উপায়ে আপনি কারি পাতার তেল কিংবা মাস্ক তৈরি করবেন পাশাপাশি কারি পাতা ব্যবহারের কিছু সর্তকতা ও জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন উত্তর সম্পর্কে খুব সুন্দরভাবে জানলেন। তবে একটা কথা আপনার মাথায় রাখতে হবে,

সঠিকভাবে যদি আপনি আপনার চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার করতে চান তবে অবশ্যই উপরের বিষয়গুলো মেনে চুলের যত্ন নিন। এতে করে অনেক ভালো ফলাফল পাবেন বলে মনে করি। আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এইখানে এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।   

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url