কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন- ৫ টি কার্যকারী উপায়
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন? কি কি সহজ উপায়ে কানাডা
ভিসা পারমিট আবেদন করা সম্ভব? আপনি যদি এসব বিষয়ে সঠিক এবং সুন্দরভাবে
জানতে চান তবে আজকের এ আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
আপনি যদি বৈধভাবে কানাডায় কাজ করার অনুমতি পেতে চান তবে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে
পড়ুন।কেননা আজকে এই আর্টিকেলের মধ্যে কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে
খুব সহজে ৫ টি উপায় ফলো করে পাওয়া সম্ভব সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।
পোস্ট সূচীপত্রঃ কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন এ ৫ টি কার্যকরী উপায়
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি এবং কেন প্রয়োজন
- ভিসা আবেদনের জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা উচিত
- যেসব কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হয়
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রকারভেদ ও ব্যবহার
- যেভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বাতিল হলে যা করনীয়
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রাপ্তির সময়কাল ও ব্যয়
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- আমাদের কিছু কথা
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন এ ৫ টি কার্যকরী উপায়
সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলতে বোঝায় কোন দেশে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি
চাওয়াকে।সেক্ষেত্রে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন হয়তো এটা আপনার
ক্ষেত্রে একটি জটিল কাজ হতে পারে। তবে আপনি যদি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন
তবে সেটা আপনার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। তাহলে চলুন জেনে নিই কানাডা
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনে পাঁচটি কার্যকরী উপায় সম্পর্কে।
1. চাকরির প্রস্তাব সংগ্রহ করুন
আপনি যদি কানাডায় বৈধভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করেন তবে শুরুতে আপনাকে একটি বৈধ
চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে।কেননা আপনি যখন কানাডায় বৈধভাবে কাজ করার
প্রস্তাব পাবেন তখন কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন আপনার ক্ষেত্রে অনেক
সহজ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো...
- আন্তর্জাতিক চাকরির ওয়েবসাইটের মধ্যে চাকরি খুঁজুন। বিশেষ করে "Job bank kanada, Linkedin" এসব ওয়েবসাইটে চাকরি খুঁজতে পারেন।
- কানাডার চাকরির নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (LMIA) প্রয়োজন পড়তে পারে।কেননা এটি দেখাবে যে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য কোন সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে আপনি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন।
2. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করুন
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করতে সেখানকার যাবতীয় প্রয়োজনীয়
ডকুমেন্টসগুলো প্রস্তুত করুন। তার জন্য আপনাকে যেসব বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে
তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- পাসপোর্ট ঠিক রাখুন। ( মেয়াদ থাকতে হবে)
- নিয়োগদাতার দেওয়া চাকরির প্রস্তাব পত্র ঠিক রাখুন।
- লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (LMIA) প্রস্তুত রাখুন। প্রয়োজন পড়তে পারে।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র প্রস্তুত রাখুন।
- পাশাপাশি আপনার কাজের যোগ্যতার প্রমাণপত্র ঠিক রাখুন।
- ইংরেজি/কানাডা ভাষার দক্ষতা অর্জন করুন। সাথে প্রমাণস্বরূপ এর সার্টিফিকেট রাখুন।
- আপনার মেডিকেল পরীক্ষা এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সাথে রাখুন।
3. বায়োমেট্রিক এবং সাক্ষাৎকার
আপনি যদি আপনার আবেদনপত্র জমা দেন তবে সেই ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক দেওয়ার
নির্দেশনা পাবেন।তবে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার পরে কিছু ক্ষেত্রে
আপনাকে দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে। তার জন্য অবশ্যই আপনাকে পূর্ব
প্রস্তুতি রাখতে হবে।
4. অনলাইনে আবেদন করুন
কানাডা ভিসা আবেদনের জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে অনলাইনে আবেদন করা। তার
জন্য আপনি কানাডার ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট www.canada .ca এতে
যান। এরপরে MyCIC একাউন্ট খুলুন এবং আপনার তথ্য দিন। অতঃপর
সেখানকার প্রয়োজনও ফি জমা দিন ( এটি সাধারণত CAD 155 )।
5. প্রসেসিং সময় এবং অনুমোদন
আপনি যখন কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করবেন সেই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
প্রসেসিং হতে সাধারণত ২-৪ মাস সময় লাগে। তাই চেষ্টা করবেন এটা কিছুটা আগে
জমা দেওয়ার। এরপরে আপনার আবেদন অনুমোদিত হয়ে গেলে আপনাকে ভিসা এবং
ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা হবে। তবে সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি কোন বিশেষজ্ঞ
দ্বারা নিয়োগ করেন তবে প্রক্রিয়াগুলো আরো অনেক সহজ হবে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি এবং কেন প্রয়োজন
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হলো এক ধরনের বৈধ অনুমতি, যেটা বিভিন্ন দেশের
কর্মীদের কানাডায় কাজ করার অনুমতি দিয়ে থাকে। এটি বিশেষ করে
কানাডিয়ান পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা বিশেষ প্রোগ্রামের অধীনে প্রদান করা হয়ে
থাকে। কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা একজন বিদেশী নাগরিককে নির্দিষ্ট সময়ের
জন্য সেই দেশে কাজ করার অনুমতি দেয়। এটি উন্নত জীবন
যাত্রা, সমৃদ্ধ কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং এবং সংস্কৃতির জন্য কানাডা
বিশ্বব্যাপীর কাছে একটি পছন্দের গন্তব্য।
ওয়ার্ক পারমিট কেন প্রয়োজন?
কানাডায় প্রবেশের জন্য কেন ওয়ার্ক পারমিট প্রয়োজন? এটা হয়তো আপনি সঠিক
ভাবে জানেন না।তাই চলুন বিষয়টি খুব সুন্দর ভাবে ক্লিয়ার করা যাক। কানাডার
শ্রম বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খুবই
সহায়ক।কেননা এটি নিশ্চিত করে যে বিদেশি কর্মীরা কাজের সুযোগ গ্রহণ করলেও
স্থানীয় কর্মীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোন ক্ষতি হবে না।এছাড়াও বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে কানাডিয়ান নিয়োগ দাতাকে (LMIA) জমা দিতে হয়। যার মাধ্যমে
প্রমাণিত হয় যে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা স্থানীয় কর্মীদের প্রয়োজন।
তবে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন শুধুমাত্র চাকরির দরজা খুলে দেয় ঠিক এমনটি
নয়। বরং এটি আপনাকে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পথ প্রশস্ত করে
দেবে। কানাডার স্বাস্থ্য সেবা, উন্নত শিক্ষা, পাশাপাশি এর
কর্মক্ষেত্রের মান আপনার ভবিষ্যৎ নির্মাণে অধিক সহায়ক হবে। তবে সেখানে
পরিবার নিয়ে বসবাসের সুযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা আপনার কর্মজীবনের প্রতি
এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আপনার
ক্যারিয়ারে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
ভিসা আবেদনের জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা উচিত
আপনি যদি কানাডায় আপনার কাজ করার স্বপ্ন পূরণ করতে চান তবে সেই ক্ষেত্রে আপনাকে
সঠিক যোগ্যতা অর্জন এবং সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কেননা এটি আপনার কানাডার
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো জানেন কানাডা
তাদের শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করতে বিদেশি কর্মীদের স্বাগত জানাই। তবে সেই
ক্ষেত্রে তারা এটা নিশ্চিত করে যে, আবেদনকারীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা
তাদের মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার
জন্য আমাদের কি কি যোগ্যতা থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ AI ফটো তৈরি করুন মনের মতো- সেরা ৮ টি অ্যাপ
- আপনি যদি একজন কানাডিয়ান নিয়োগদাতা হন তবে অবশ্যই আপনার কাছে বৈধ চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে।
- অনেক ক্ষেত্রে লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রয়োজন হয়। যা দেখায় যে স্থানে কর্মী পাওয়া সম্ভব নয়।
- কানাডায় আপনার প্রস্তাবিত চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক।
- আপনি যদি কানাডায় কাজের জন্য যেতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি অথবা ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
- আপনার প্রাসঙ্গিক কাজের দক্ষতা থাকা উচিত। কেননা এটি আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা আবেদনকে শক্তিশালী করবে।
- আপনি যদি আবেদন করেন তবে আপনাকে অবশ্যই পরিষ্কার একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- কানাডার স্বাস্থ্যমানদণ্ড পূরণ করতে আপনাকে মেডিকেল পরীক্ষা করে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- যদি আপনি অন্য কোন দেশ থেকে আবেদন করতে চান তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে সেই দেশে বৈধভাবে থাকার প্রমাণ দিতে হবে।
যেসব কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হয়
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কর্মস্থল গুলোর মধ্যে কানাডা রয়েছে। যেখানে
বৈচিত্র্যময় কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। তবে কানাডায় বেশিরভাগ কাজের জন্যই
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হয়। এই ভিসার ফলে একজন কর্মী নির্দিষ্ট
নিয়োগদাতার অধীনে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার অনুমতি পাই।তবে
কানাডিয়ান সরকার এমন কিছু পেশার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করে যেগুলোতে
স্থানীয় কর্মের অভাব রয়েছে এবং দক্ষ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন।
কানাডায় যেসব পেশা বা কাজের কারণে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হয়
সেসব কাজগুলো হলো কোন কিছু
নির্মাণ করা, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি এবং
পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট খাতের
জন্য বিদেশি কর্মীর চাহিদা অত্যন্ত বেশি। তবে আরও বিশেষ কিছু পেশা রয়েছে
যেগুলোতে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ করতে কানাডিয়ান সরকার অধিক আগ্রহী। সে
পেশাগুলো হলো নার্স, চিকিৎসক, ওয়েব ডেভলপার, আইটি বিশেষজ্ঞ, কৃষি শ্রমিক এবং
রাঁধুনী।
তবে কানাডার রিসোর্স খাত যেমন খুনি এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন কাজে দক্ষ
কর্মীর অভাব মেটাতে ওয়ার্ক পারমিট এর মাধ্যমে কর্মী আনা হয়। এছাড়াও আরো
কিছু বিশেষ পেশা রয়েছে যেগুলোর জন্য কানাডিয়ান সরকার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
প্রদান করে থাকে। সে পেশাগুলো হলো গবেষণা, পারফরমিং আর্টস, অথবা ধর্মীয় কার্যকলাপ। আপনি যদি সঠিক যোগ্যতা এবং আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন তবে কানাডার
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আপনার পেশাগত জীবনে অধিক উন্নতি করবে।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রকারভেদ ও ব্যবহার
আপনি কি জানেন কানাডা বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কেন প্রদান
করে? চলুন তাহলে বিষয়টি জেনে নিই।কানাডা বিভিন্ন ধরনের
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রদান করে থাকে কারণ কানাডার শ্রম বাজারে বিদেশি কর্মীদের
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তবে এই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা গুলো আবেদনকারীর
যোগ্যতা চাকরি এবং প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে
থাকে। আপনি হয়তো জানেন না, কানাডার ওয়ার্ক পারমিট মূলত দুটি শ্রেণীতে
বিভক্তঃ ওপেন ওয়ার্ক পারমিট এবং এম্প্লয়ার-স্পেসিফিক ওয়ার্ক পারমিট।
ওপেন ওয়ার্ক পারমিট
ওপেন ওয়ার্ক পারমিট এমন এক ধরনের ভিসা যা কোন নির্দিষ্ট নিয়োগদাতার
সঙ্গে যুক্ত নয়। চলুন বিষয়টি আরেকটু ক্লিয়ার করা যাক। এটি এমন এক
ধরনের ভিসা যা একজন কর্মীকে কানাডায় যে কোন যোগ্য নিয়োগদাতার
অধীনে আপনাকে কাজ করার সুযোগ দিবে। আপনি যদি কানাডায় আপনার পেশাগত
অভিজ্ঞতা বাড়াতে চান কিংবা বেশি স্বাধীনতা পছন্দ করেন তবে আপনার জন্য এটি একটি
পারফেক্ট ভিসা। আশা করি আপনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
এম্প্লয়ার-স্পেসিফিক ওয়ার্ক পারমিট
এই ভিসাটি মূলত নির্দিষ্ট একটি নিয়োগদাতার সঙ্গে যুক্ত। যার জন্য এ
ধরনের ওয়ার্ক পারমিট পেতে আপনার লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট
(LMIA) প্রয়োজন পড়বে। বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা ও
প্রযুক্তি খাত সহ আরো অনেক কাজ এই ভিসার আওতায়। তাই আপনি যদি বিশেষ
দক্ষতার সাথে কোন নির্দিষ্ট কোম্পানিতে কাজ করতে চান কানাডায় গিয়ে তবে আপনার
ক্ষেত্রে এই ধরনের ভিসা কার্যকরী হবে।
তবে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ব্যবহার শুধু আপনার কাজ করার অনুমতি দিবে ঠিক
এমনটি নয়।বরং এই ভিসা আপনার একটি সকল কর্মজীবন গড়ার প্রথম পদক্ষেপ বলতে
পারেন। কেননা এটি আপনার স্থানীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং ভবিষ্যতে
স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। তাই আপনি কানাডিয়ান
প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটধারি হিসেবে খুব
সহজেই সেখানে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারেন। সঠিক ভিসা নিশ্চিত
করে এবং নিয়ম মেনে আবেদন করলে সেখানে আপনার একটি সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ
রয়েছে।
যেভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়
কানাডায় কাজ করার স্বপ্ন হয়তো অনেকেরই। হতে পারে তার মধ্যে আপনিও
একজন। কি, ঠিক বললাম তো? যদি এমনটিই হয় তবে আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে
হলে সঠিক প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা আপনার জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আবেদন প্রক্রিয়াটি যদি আপনি নিয়ম মেনে করতে
পারেন তবে আপনার সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে। তবে চলুন খুব
সুন্দর ও সহজ ভাবে জেনে নিই কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন
কিভাবে করতে হয়।
1. চাকরির প্রস্তাব পাওয়া
- শুরুতেই আপনি কানাডিয়ান কোন নিয়োগদাতার কাছ থেকে একটি বৈধ চাকরির প্রস্তাব সংগ্রহ করুন।
- এরপর নিয়োগদাতা যদি আপনার (LMIA) প্রয়োজন পড়ে তবে তা নিশ্চিত করুন।
আরো পড়ুনঃ ঝাপসা ছবি কিভাবে স্পষ্ট করা যায় জেনে নিন
2. আপনার যোগ্যতার মূল্যায়ন
- বিশেষ করে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কাজের অভিজ্ঞতা এবং ভাষার দক্ষতা যাচাই করুন।পাশাপাশি এসব কিছুর সার্টিফিকেট তৈরি করুন।
- আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন পাশাপাশি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করুন।
3. প্রয়োজনীয় পত্র সংগ্রহ
- পাসপোর্ট ঠিক রাখুন। ( যেনো মেয়াদ ঠিক থাকে)
- নিয়োগ দাতার চাকরির চুক্তিপত্র সংগ্রহ করে রাখুন।
- (LMIA) পত্রটি জোগাড় করে রাখুন। ( প্রয়োজন পড়তে পারে )
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখুন।
- আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ রাখুন।
4. IRCC ওয়েবসাইটে আবেদন করুন
- কানাডার সরকারি ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে MyCIC অ্যাকাউন্ট খুলুন।
- এরপর অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় পত্র আপলোড করুন।
- সাথে আবেদন ফি জমা দিন।
5. বায়োমেট্রিক ও মেডিকেল পরীক্ষা
- যখন আপনি আবেদন জমা দিবেন তারপরে বায়োমেট্রিক এর জন্য নির্দেশনা পাবেন।
- এরপরে নির্ধারিত মেডিকেল পরীক্ষার সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করুন।
6. আবেদন প্রসেসিং
- আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২-৪ মাস সময় লাগতে পারে।
- প্রয়োজন অনুসারে সাক্ষাৎকার থেকে দূতাবাস ডাক আসতে পারে।
7. ফলাফল ও অনুমোদন
- আপনার আবেদন যদি অনুমোদিত হয় তবে আপনাকে ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা হবে।
- এরপরে আপনি কানাডায় যাত্রার প্রস্তুতি নিতে পারেন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বাতিল হলে যা করণীয়
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা যদি বাতিল হয় তবে এটি একটি হতাশাজনক কারন হতে
পারে। তবে এই সমস্যাটি শেষ নয়। কেননা এ সমস্যাটি সামাল দেওয়ার
মতো ব্যবস্থা রয়েছে। কেননা সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি পুনরায়
আবেদন জমা দিতে পারবেন এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে
আগে বুঝতে হবে যে ভিসা বাতিল হওয়ার কারণ কি। তাহলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি এর
সমাধান করতে পারবেন। তো চলুন জেনে নিই ভিসা বাতিল হলে করণীয়
কি।
- ভিসা বাতিলের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। কারণটি যদি বিভিন্ন রকমের তথ্য সংক্রান্ত হয়ে থাকে তবে তা সংশোধন করার চেষ্টা করুন।
- অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন অথবা আইনজীবীর সাহায্য নিতে পারেন। কেননা তারা আপনার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
- ভিসা বাতিল হওয়ার কারণ সংশোধনযোগ্য হলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পুনরায় আবেদন করুন।
- ভিসা বাতিলের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অফিসে আপিল করুন এবং আপনার যুক্তি উপস্থাপন করুন।
- আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বাতিলের জন্য যদি কানাডা ছাড়তে হয় তবে সীমিত সময়ের জন্য বিকল্প ভিসার জন্য আবেদন করুন।
- আপনার ভিসা বাতিল হওয়ার সমস্যাটি স্বল্প সময়ের জন্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি সঠিক পদক্ষেপ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে এর সমাধান করুন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রাপ্তির সময়কাল ও ব্যয়
আপনি হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছেন কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সাধারণত
২-৪ মাসের মধ্যে এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।তবে সময়ের ওপর নির্ভর
করে যে আপনি যে দেশে আবেদন করছেন এবং আপনার পত্র প্রসেসিং এর গতি কত
দ্রুত।কিন্তু বিশেষ করে উচ্চ প্রয়োজনীয় পেশা গুলোর জন্য এ প্রক্রিয়াটি
আরো দ্রুত সম্পন্ন হতে পারে। এছাড়াও নথি বা পত্র জমা দেওয়ার সময় কোন
রকমের ভুল থাকলে অথবা অতিরিক্ত যাচাইয়ের প্রয়োজনে কিছু সময় বাড়তে
পারে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন ফি হিসেবে সাধারণত
CAD 155 কানাডিয়ান ডলার প্রয়োজন।তবে আপনাকে যদি বায়োমেট্রিক তথ্য
প্রদান করতে হয় সেক্ষেত্রে আরো CAD 85 ডলার ব্যয় হতে
পারে। এছাড়াও মেডিকেল পরীক্ষা অথবা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে সে
ক্ষেত্রেও আলাদাভাবে ব্যায় হতে পারে।তবে কিছু নিয়োগ দাতা রয়েছে
যারা অনেক সময় (LMIA) প্রসেসিং ফি হিসেবে প্রায় CAD 1000 ডলার বহন করেন, তবে এটি নিয়োগ দাদার উপর নির্ভর করবে।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
আপনি এতক্ষণে অবশ্যই বুঝে গেছেন যে আপনি যদি কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে চান
তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সঠিক প্রক্রিয়া এবং প্রস্তুতি অনুসরণ করতে
হবে। তাহলে চলুন সেই গুরুত্বপূর্ণ টিপস গুলো জেনে নিই যেগুলো আপনাকে কানাডা
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য অনেকটা সাহায্য করবে।
- আবেদনপত্রের সঙ্গে যাবতীয় প্রয়োজনে পত্র যুক্ত করুন। বিশেষ করে পাসপোর্ট, চাকরির প্রস্তাব পত্র, LMIA বা ভাষার দক্ষতার প্রমাণ।
- কোন নথি বা পত্র আবেদন পত্রের সঙ্গে নেওয়ার পূর্বে সবগুলো ভালোভাবে চেক করে নিবেন যেন কোন ভুল না থাকে।
- আপনার আবেদনকে শক্তিশালী করতে ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ পরীক্ষায় ভালো স্কোর করুন।
- নিয়োগ দাতা যদি LMAI এর প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে তা নিশ্চিত করুন। এটি আপনার ভিসা আবেদনকে সহজ করে দেবে।
- কানাডার সরকারি ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে আবেদন করুন। এতে করে আপনি এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন।
- আবেদন প্রক্রিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সেন্টারে বায়োমেট্রিক বা মেডিকেল পরীক্ষা নিশ্চিত করুন।
- বিভিন্ন রকমের প্রতারক হতে সাবধানতার ক্ষেত্রে যাচাইকৃত ইমিগ্রেশন পরামর্শক বা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আবেদন করুন।
- কানাডায় অবস্থানরত সময়ে নিজেকে সমর্থন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্থিক সামর্থের পত্র প্রদান করুন।
- আবেদন প্রক্রিয়ার সময় ধৈর্য ধারণ করুন এবং সময়মতো আবেদন জমা দিন। এতে করে স্ট্যাটাস ট্র্যাক করা সহজ হয়।
আমাদের কিছু কথা
আমরা এতক্ষণে জানলাম কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের পাঁচটি কার্যকরী উপায়
সম্পর্কে।পাশাপাশি আমরা এই আর্টিকেল থেকে জানলাম কোন সব কাজের জন্য পারমিট
ভিসার প্রয়োজন হয়, কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রকারভেদ ও ব্যবহার এবং কানাডা
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস। আমি আশা করছি আপনি যদি
এই পুরো আর্টিকেলের প্রতিটি প্রসেস মেনে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন
করেন তবে আপনার আবেদন সফল হবে।
এতক্ষণ পুরো আর্টিকেল মন দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই
আর্টিকেল থেকে যদি আপনি কোন রকমের উপকৃত হন তবে অবশ্যই কমেন্ট করে
জানাবেন। আর আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পড়তে চান
তবে নিয়মিত এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। কেননা এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত এ
ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url