চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার সম্পর্কে জানুন খুব সহজে
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার কিভাবে করতে হয়? আমাদের চুলের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য ধরে রাখতে কালোকেশী কতটা কার্যকরী? এ সবকিছু যদি আপনি সুন্দরভাবে
জানতে চান তবে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় বিভিন্ন রকমের কাজের ফাঁকে আমাদের চুলের
সঠিক যত্ন নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।সেই ক্ষেত্রে আপনার চুলের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য কালোকেশী আপনার সেরা সঙ্গী হতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
- প্রাচীন নিয়মে চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
- কালোকেশী কি এবং এর উপাদান সমূহ
- চুলের বিভিন্ন সমস্যায় কালোকেশীর উপকারিতা
- বাড়িতে সহজ পদ্ধতিতে কালোকেশী তৈরির পদ্ধতি
- চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
- চুলের ধরন অনুযায়ী যেভাবে কালোকেশী ব্যবহার করা উচিত
- চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে কালোকেশী যেভাবে ব্যবহার করা উচিত
- কালোকেশীর ব্যবহারে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
- নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহারে যেসব সুফল পাওয়া যায়
- সবশেষে আমাদের মন্তব্য
প্রাচীন নিয়মে চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার এর প্রাচীন নিয়ম ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের
চাবিকাঠি। কেননা প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষরা চুলের যত্নের জন্য
প্রাকৃতিক সকল উপদানের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা কালোকেশী ব্যবহার এর মাধ্যমে
চুলের সুস্থতা, মজবুত ও গঠন ধরে রাখতেন। আর তখন থেকে আজও সমানভাবে কালোকেশীর
ব্যবহার অধিক জনপ্রিয়। এই আর্টিকেল থেকে এখন আপনি জানতে পারবেন প্রাচীন নিয়মে
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার এর পদ্ধতি এবং গুণাগুণ।
১। চুল পরিষ্কার করার জন্য
প্রাচীনকালে চুল পরিষ্কার করার জন্য কালোকেশী ব্যবহার ছিল এক অন্যতম প্রধান
নিয়ম। সেই ক্ষেত্রে তারা এক মুঠো শুকনো কালোকেশীর পাতা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে
নির্দিষ্ট সময় চুল ধোয়ার সময় সেই পানি ব্যবহার করতেন। আর এই পদ্ধতি ব্যবহার
করার ফলে এটি চুলের ময়লা দুর করে চুলকে মজবুত করে তোলে। আপনি যদি এই নিয়মে চুলে
কালোকেশী ব্যবহার করেন তবে আপনার ক্ষেত্রে এটা এমন কার্যকরী হবে।
২। মাথার খুশকি দূর করতে
প্রাচীনকালে মাথার খুশকি দূর করার জন্য কালোকেশীর পেস্ট তৈরি করে সেটা মাথায়
লাগানো হতো। কেননা কালোকেশীর প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ মাথার খুশকি দূর
করে থাকে। সাথে এটি মাথার ত্বকের অন্যান্য যাবতীয় সমস্যা দুর করতে অধিক
কার্যকরী। আপনার মাথায় যদি খুশকি থেকে থাকে তাহলে আপনি সেই প্রাচীন নিয়ম
অনুযায়ী এটা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ভালো ফলাফল পাবেন।
৩। চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে
আমাদের চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে কালোকেশীর এক অন্যরকম গুণ রয়েছে। প্রাচীনকালে চুলের
বৃদ্ধির জন্য কালোকেশীর পাতা বেটে সেইগুলো সুন্দর করে তেল বা নারিকেলের তেল এর
সাথে মিশিয়ে মাথায় দেওয়া হতো। যার ফলে এটি মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের
দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করত। তাই চুলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই প্রাচীন নিয়ম
ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
৪। চুলের রং বজায় রাখতে
কালোকেশী আমাদের প্রাকৃতিক চুলের রং ধরে রাখতে অধিক সহায়ক। সে ক্ষেত্রে
প্রাচীনকালে কালোকেশী ব্যবহার এর ফলে এটি চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতো। এছাড়াও
চুল ধোয়ার পরও তারা কালোকেশী রস লাগিয়ে দিতো। আপনি যদি আপনার চুলের প্রাকৃতিক
রং ধরে রাখতে চান তবে সেই প্রাচীন নিয়ম ব্যবহার এর মাধ্যমে সেটা করতে পারেন। এতে
করে সেটা আপনার চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে সহায়ক হবে।
কালোকেশী কি এবং এর উপাদান সমূহ
চুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যবহার এর প্রাচীন নিয়ম এবং গুণাগুণ আমরা জেনেছি। কিন্তু
এই কালোকেশী আসলে কি এবং এর উপাদান সমূহ কি কি এটা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে
চলুন খুব সুন্দর এবং সহজভাবে জেনে নিই কালোকেশী কি এবং এর উপাদানসমূহ কি
কি।
কালোকেশী কি ?
কালোকেশী হলো এমন এক ধরনের প্রাচীন প্রাকৃতিক উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়
ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও এর আর একটি বড় গুণ হলো এটি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত
করে এবং চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে অধিক কার্যকরী। বিশেষ করে কালোকেশীর পাতা, ফুল,
রস সবকিছুই আমাদের চুলের জন্য অনেক কার্যকরী। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে এটি আমাদের
চুলের রং ধরে রাখে, চুল পড়া রোধে করে সাথে চুলের ক্ষতি প্রতিরোধ করে থাকে। তাহলে
চলুন এবার জেনে নিই এই উপকারী কালোকেশীর উপাদানগুলো কি কি।
কালোকেশীর উপাদানসমূহ
১। আয়রন এবং ক্যালসিয়াম: কালোকেশীর উপাদান এর মধ্যে বিশেষ করে
ক্যালসিয়াম ও আয়রন এই দুটি খনিজ পদার্থ রয়েছে যেগুলো আমাদের চুলের শেকড় মজবুত
করে থাকে। সাথে চুলের ভেঙে যাওয়া ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
২। ভিটামিন সি: কালোকেশী ব্যবহারে এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি আমাদের মাথার
ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। শুধু তাই নয়, এই ভিটামিন সি আমাদের মাথার খুশকি
প্রতিরোধ করে থাকে।
৩। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ: কালোকেশীর পাতা এবং ফুলে বিভিন্ন রকমের আয়রন
ভিটামিন এর পাশাপাশি অধিক পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আমাদের চুলের ক্ষতি
প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়াও এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের চুলের কোষ পুনরুদ্ধারে
সাহায্য করে থাকে।
৪। আমিনো অ্যাসিড: কালোকেশীতে বিদ্যমান আমিনো অ্যাসিড আমাদের চুলের পুষ্টি
উপাদান সরবরাহ করে সাথে আমাদের চুলের কোষকে পুনর্গঠনে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
তাই আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কালোকেশীর যথেষ্ট ভূমিকা
রয়েছে।
৫। অ্যান্টিসেপটিক গুণ: কালোকেশীতে এক ধরনের অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে যা
আমাদের মাথার ইনফেকশন দূর করে দেয়। সাথে এটি আমাদের মাথার চুল পড়া কমাতে
সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনার মাথার
যাবতীয় সমস্যা দুর হয়ে যাবে সাথে চুলের স্বাস্থ্য অনেক বেশি উন্নত হবে।
চুলের বিভিন্ন সমস্যায় কালোকেশীর উপকারিতা
বর্তমান সময় চুল পড়ার সমস্যা এটা প্রায় সকলের কাছেই সাধারণ বিষয় হয়ে
দাঁড়িয়েছে। সেই ক্ষেত্রে এই সমস্যা সমাধানে চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকে অধিক কার্যকরী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা কালোকেশীর
পাতা বা রস সরাসরি আমাদের মাথার তালুতে লাগানোর ফলে মাঘর রক্ত সঞ্চালন বাড়িতে
থাকে এবং চুলের গোড়া শক্তিশালী করে। শুধু তাই নয়, এটি ছাড়াও এই কালোকেশী
আমাদের চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন তাহলে
সেইগুলো জেনে নিই।
- মাথার চুল পড়া দূর করার জন্য কালোকেশী অধিক কার্যকরী। তাই কালোকেশী ব্যবহার করুন যা আমাদের মাথার চুল পড়ার সমস্যা দূর করে মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার করুন। কেননা নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার এর ফলে আমাদের মাথার চুল ঘন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠে।
- কালোকেশী আমাদের মাথার খুশকি দূর করে থাকে। যেগুলো আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই মাথার খুসকি দূর করতে নিয়মিত এটি ব্যবহার করুন।
- কালোকেশীতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ আমাদের মাথার বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ দূর করে থাকে। তাই মাথার সুস্থতা নিশ্চিত করে চুল সুন্দর রাখতে কালোকেশীর ব্যবহার অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
- কালোকেশী আমাদের মাথার ত্বককে শীতল রাখে সাথে মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
- চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূর করতে কালোকেশী অধিক কার্যকরী।
- চুল নরম এবং উজ্জ্বল করতে কালোকেশীর পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে করে চুল নরম ও উজ্জ্বল হয়।
- চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কালোকেশীর পেস্ট তৈরি করে সেটা নারিকেলের তেল এর সাথে মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে করে চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ভাঙ্গা চুল মেরামত হয়।
- চুলের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে কালোকেশী অনেক সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত ব্যবহার এর ফলে এটি চুলের কালো রংটি ধরে রাখে।
বাড়িতে সহজ পদ্ধতিতে কালোকেশী তৈরির পদ্ধতি
আমাদের চুলের যত্নে বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে কালোকেশীর
ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল
থেকেই হয়ে আসছে। কেননা এর গুনাগুন এতটাই বেশি যে আমাদের চুলের যাবতীয়
রকমের সমস্যা দূর করে থাকে। তবে সেই ক্ষেত্রে বাজারে তৈরিকৃত কালোকেশী
পাওয়া গেলেও বাড়িতে তৈরিকৃত কালোকেশী অধিক বিশুদ্ধ ও কার্যকরী। আপনি
যদি সহজ উপায়ে কালোকেশী তৈরি করতে চান, তবে নিচের দেওয়া ধাপগুলো
অনুসরণ করে তৈরি করতে পারেন।
কালোকেশী তৈরীর পদ্ধতি
১। উপকরণ সংগ্রহঃ
- কালোকেশীর টাটকা বা তাজা পাতা
- বিশুদ্ধ পানি
- নারিকেলের তেল
২। পাতা পরিস্কারঃ কালোকেশীর পাতা সংগ্রহ করার পরে সেইগুলো
ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। যেন পাতায় কোন ময়লা বা অমেধ্য না
থাকে।
৩। পাতা পেস্ট তৈরির পদ্ধতিঃ
- কালোকেশীর পাতা ব্লেন্ডারে দিয়ে সেগুলো খুব সুন্দর ভাবে ব্লেন্ড করুন।
- পাতলা পেস্ট তৈরি করতে প্রয়োজনে সামান্য পরিমাণে পানি ব্যবহার করুন।
- পেস্ট থেকে যদি আরো মসৃণ রস পেতে চান তবে পাতলা কাপড় ব্যবহার করে পেস্ট ছেঁকে নিন।
৪। তেল মিশ্রণ ও কালোকেশী সংরক্ষণঃ
- কালোকেশীর পেস্ট অথবা রসে নারিকেল তেল মিশিয়ে দিয়ে সেটি ভালোভাবে নাড়ুন।
- অতঃপর কাছের একটি পরিষ্কার বোতলে কালোকেশীর মিশ্রণ সংগ্রহ করুন।
- যদি এটি অধিক সময় ধরে ব্যবহার করতে চান তবে ফ্রিজে রেখে দিন। এতে করে আপনি এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
৫। কালোকেশী যেভাবে প্রয়োগ করবেনঃ
- কালকেশীর মিশ্রণ চুলের গোড়ায় অথবা মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগিয়ে দিন।
- এটি মাথায় ৩০ মিনিট এর মতো রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- চুলের স্বাস্থ্যগত উন্নতি পেতে এটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন।
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
আপনি হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছেন চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার একটি কার্যকরী ও
প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে অধিক পরিচিত। এটি আমাদের চুল পড়া রোধ থেকে শুরু
করে, মাথায় খুশকির সমস্যা দূর করা সাথে চুলের প্রাকৃতিক রং বজায়
রাখতে অধিক কার্যকরী। তবে আমরা যদি কালোকেশী সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারি
তবে এর কার্যকারিতা বহু গুণে বেড়ে যাবে।এছাড়াও নিয়মিত কালোকেশী
ব্যবহারে আপনার চুল হয়ে উঠবে মসৃণ এবং ঘন। তাহলে চলুন এবার আমরা জেনে
নিই কালোকেশী ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।
কালোকেশী তেল ম্যাসাজঃ কালকেশীর পাতা বা রস দিয়ে তৈরিকৃত তেল হালকা
গরম করে মাথায় ম্যাসাজ করুন। এতে করে এটি আপনার চুলের গোড়ায় পুষ্টি
জোগাবে সাথে মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে। সেজন্য মাথায় রক্ত সঞ্চালন
বাড়াতে নিয়মিত কালোকেশী তেল ব্যবহার করুন।
শ্যাম্পু করার আগে ব্যবহারঃ আপনি যদি মাথায় শ্যাম্পু করেন তবে চুলের
রুক্ষতা দূর করার জন্য শ্যাম্পু করার অন্তত ১ ঘন্টা আগে মাথায় কালোকেশী তেল
অথবা পেস্ট প্রয়োগ করুন। কেননা শ্যাম্পু করার আগে কালোকেশী তেল বা পেস্ট
প্রয়োগ করার ফলে আপনার চুলের রুক্ষতা দূর হয় সাথে চুলের মসৃণতা বজায়
রাখে।
চুলে প্যাক ব্যবহারঃ চুলে প্যাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কালোকেশী পেস্ট
চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের মতো রেখে দিন। অতঃপর হালকা গরম পানি দিয়ে এটি
ধুয়ে ফেলুন।
খুশকি দূর করতেঃ মাথার খুশকি দূর করতে সঠিক নিয়মে কালোকেশী
ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে আপনি কালোকেশীর পেস্টে কয়েক
ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে দিন।কেননা এটি আমাদের চুলের
যাবতীয় সমস্যা দূর করতে অধিক কার্যকরী।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহারঃ কালোকেশীকে আপনি প্রাকৃতিক
কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে কালোকেশী পাতার সিদ্ধ
করা পানি চুল ধোয়ার শেষ ধাপের দিকে ব্যবহার করতে পারেন। যার ফলে এটি আপনার
চুলকে নরম এবং চকচকে করে তুলবে।
চুলের ধরন অনুযায়ী যেভাবে কালোকেশী ব্যবহার করা উচিত
আমাদের একেক জনের চুলের ধরন প্রায় একেক রকম। সেই জন্য চুলের ধরন অনুযায়ী
কালোকেশী ব্যবহারের ধরনও ভিন্ন হতে পারে। যেমন ধরুন আমাদের কারো
চুল রুক্ষ বা শুষ্ক, আবার কারো চুল তৈলাক্ত বা স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে
আপনি কালোকেশী কিভাবে ব্যবহার করবেন? হয়তো সেটা আপনার জানা নেই। তবে
কালোকেশী এমন এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যেটা সব ধরনের চুলের ক্ষেত্রে ব্যবহার
করা অধিক কার্যকরী। তাই আপনি যদি চুলের ধরন অনুযায়ী এটি ব্যবহার করেন তবে
এর কার্যকারিতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
তাহলে চলুন এবার আমরা জেনে নিই চুলের ধরন অনুযায়ী কালোকেশী কিভাবে ব্যবহার
করা উচিত।
১। রুক্ষ ও শুষ্ক চুলের জন্যঃ আপনার চুল যদি রুক্ষ অথবা শুষ্ক
হয়ে থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে কালোকেশীর পেস্টের সাথে নারিকেল তেল অথবা
অলিভ অয়েল একসাথে মিশ্রণ করে চুলে লাগিয়ে দিন। এর ফলে এটি আপনার
চুলের আদ্রতা বজায় রেখে চুলকে নরম এবং মসৃণ রাখবে।
২। তৈলাক্ত চুলের জন্যঃ আমাদের অনেকের চুল তৈলাক্ত। সে
ক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? সেক্ষেত্রে আপনার তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে কালোকেশীর রসের
সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশ্রণ করে সেটা চুলে লাগিয়ে দিন। কেননা এটি
ব্যবহারে চুলের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাথা পরিষ্কার রাখে।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে নিজেকে ফিট রাখার কিছু সহজ টিপস
৩। স্বাভাবিক চুলের জন্যঃ আপনার চুল যদি স্বাভাবিক থাকে তবে সেই
ক্ষেত্রে কালোকেশী পেস্ট সরাসরি চুলে লাগিয়ে দিন। এরপরে ২০-৩০ মিনিট এর মতো রেখে
ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার স্বাভাবিক চুলকে এটি উজ্জল এবং
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে।
৪। চুলের বৃদ্ধি বাড়াতেঃ আমরা অনেকেই রয়েছি যাদের চুল খুব
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সেই ক্ষেত্রে কালোকেশীই হতে পারে আপনার অন্যতম
এক সমাধান। আপনি যদি কালকেশীর রসের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলের
গোড়ায় লাগিয়ে দিন তবে এটি আপনার চুলের দ্রুত বৃদ্ধি করবে। শুধু তাই
নয়, পাশাপাশি এটি আপনার চুলের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে থাকে।
৫। চুল পড়া রোধেঃ মাথায় অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করতে কালোকেশী
পাতা বেটে সরাসরি আপনার মাথার তালুতে প্রয়োগ করুন। এতে করে এটি চুলের
শিকড় মজবুত করে সাথে চুল পড়া রোধ করে।তাহলে নিশ্চয়ই এবার বুঝতে পেরেছেন যে চুল
পড়া রোধ করতেও কালোকেশী কতটা কার্যকরী।
চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে কালোকেশী যেভাবে ব্যবহার করা উচিত
কালোকেশী এমন এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যেটা আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার
পাশাপাশি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি বাড়াতে অধিক কার্যকরী। এটি এমন এক ধরনের
উপাদান যা আমাদের চুলের শেকড়কে মজবুত করে থাকে, রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে থাকে
পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।তবে এটি কিভাবে আমাদের চুলের দ্রুত বৃদ্ধি
সাধন করে? কালোকেশী আমাদের চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। যেটা
আমাদের চুলের বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য।কালোকেশী ব্যবহারে কিভাবে
চুলের দ্রুত বৃদ্ধি বাড়ে চলেন বিস্তারিত তথ্যের আলোকে জেনে নিই।
কালোকেশীর পাতা থেকে তৈরিকৃত তেল আমাদের চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে অধিক
কার্যকরী।সেই ক্ষেত্রে আপনাকে কালকেশীর পাতা বেটে সেটা নারিকেলের তেলের সাথে
মিশিয়ে সেটা ফুটিয়ে নিন। অতঃপর হালকা ঠান্ডা হলে তেলটি চুলে প্রয়োগ
করুন। হালকা তেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করার ফলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
যার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। তবে আপনি যদি সপ্তাহে ২-৩ বার এ
পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাহলে আপনার চুলের বৃদ্ধিতে দ্রুত পরিবর্তন দেখা দিবে।
এছাড়াও আপনার চুলের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং চুলের প্রকৃত মসৃণতা আনতে
কালোকেশীর রসের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে
পারেন। সেই ক্ষেত্রে এই মিশ্রণটি আপনাকে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ মিনিটের
মতো রেখে দিতে হবে। অতঃপর হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন। এর
ফলে এটি আপনার চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করবে এবং মাথায় নতুন চুল গজানোর জন্য
মাথার ত্বককে প্রস্তুত করবে। পাশাপাশি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ত্বরান্বিত
করবে।
কালোকেশী ব্যবহারে যেসব সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত
আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি চুলের যত্নে কালকেশী ব্যবহার এক ধরনের প্রাকৃতিক
উপাদান হিসেবে আমাদের চুলের জন্য কতটা কার্যকরী। কিন্তু কালোকেশী প্রাকৃতিক
উপাদান হলেও এর ব্যবহার সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকরী নাও হতে পারে।কেননা এটির
অতিরিক্ত ব্যবহার এবং কিছু ভুল পদ্ধতির ফলে এটি আমাদের চুলের ক্ষতি সাধনও
করতে পারে। তাই কালোকেশী ব্যবহারের পূর্বে আমাদের এর সঠিক পদ্ধতি এবং এর
কিছু সতর্কতা জানা অত্যন্ত জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নিই কালোকেশী ব্যবহারে
কোন সব সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত।
যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন
অ্যালার্জি পরিক্ষা করুনঃ আমাদের প্রায় অনেকের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা
আছে। যদি আপনার শরীরে অ্যালার্জি থেকে থাকে তবে কালকেশী ব্যবহারের পূর্বে
এটি আপনার ত্বকের ছোট একটি অংশে লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন। যদি কোন রকমে
জ্বালাপোড়া করে অথবা অস্বস্তি লাগে তবে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুনঃ আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের জন্য
কালোকেশী ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি কালকেশী
অতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলেন তবে এটি আপনার চুলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে
পারে। আপনি যদি কালোকেশী অতিরিক্ত ব্যবহার করেন তবে এটি আপনার চুলের
শিকড় দুর্বল করে দিতে পারে। তাই চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এটি সপ্তাহে ২-৩
বার এর বেশি ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।
কালোকেশীর সঠিক মিশ্রণ নিশ্চিত করুনঃ আপনি যখন কালোকেশীর সাথে
অন্যান্য উপাদানগুলো মিশ্রণ করে ব্যবহার করবেন তখন সেই দিকে একটু নজর রাখবেন যেন
অন্যান্য উপাদানগুলো পরিমাণের বেশি না হয়ে যায়। কেননা অন্যান্য উপাদানগুলো
সঠিক পরিমাণে মিশ্র না করেন তবে এটি বেশি হয়ে যাওয়ার ফলে আপনার চুলের বিভিন্ন
রকমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই অবশ্যই এই বিষয়ে একটু সতর্ক থাকা
উচিত।
দীর্ঘ সময় ধরে চুলে রেখে দেওয়া থেকে বিরত থাকুনঃ কালোকেশীর
প্যাক অথবা তেল চুলে যখন প্রয়োগ করবেন তখন ২০-৩০ মিনিট এর মতো রাখবেন। যদি
৩০-৪৫ মিনিট এর ঊর্ধ্বে রাখেন তবে সেটা আপনার ত্বকের জন্য অস্বস্তির কারণ
হতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ গর্ভাবস্থায় কালোকেশী ব্যবহারের
আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কখনোই এটি
ব্যবহার করবেন না।
খাঁটি উপাদান ব্যবহার করুনঃ কালোকেশীর পেস্ট অথবা তেল ব্যবহারের
ক্ষেত্রে অবশ্যই খাঁটিটা ব্যবহার করুন। সেই ক্ষেত্রে আপনি বাসায় তৈরি
কালকেশী ব্যবহার করতে পারেন। কেননা বাসায় তৈরি কালকেশী অত্যান্ত খাঁটি এবং
কার্যকরী হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি দোকান থেকে এর পণ্য কিনতে চান তবে এর
বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করুন। কেননা রাসায়নিক মিশ্রিত পণ্য চুলের জন্য
ক্ষতিকর হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনঃ আপনি যদি শিশুদের
চুলে কালোকেশী ব্যবহার করতে চান তবে অবশ্যই সেই পণ্য অথবা প্রাকৃতিক
উপাদানের প্রভাব নিশ্চিত করুন। এরপরে যদি ফলাফল ভালো হয় তবে সেটি শিশুদের
মাথায় ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহারে যেসব সুফল পাওয়া যায়
আমাদের চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার এর প্রাকৃতিক উপাদান প্রাচীনকাল থেকেই
ব্যবহৃত হয়ে আসছে কেননা এটি চুলের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী। নিয়মিত
এবং পরিমিত কালোকেশী ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্যে খুব সুন্দর পরিবর্তন লক্ষ্য
করা যায়।কালোকেশী নিয়মিত ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক পুষ্টি সরবরাহ করে
থাকে। যা আমাদের চুলের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অপরিহার্য। তাহলে
চলুন এবার জেনে নিই নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার করলে কি কি সুফল পাওয়া
যায়।
প্রথমত, কালোকেশী ব্যবহার আমাদের চুলের শিকড়কে মজবুত করে এবং
চুল পড়া রোধ করে। এটি আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি
করে। যার ফলে আমাদের চুলের গোড়ায় পুষ্টির উপাদান সঠিকভাবে
পৌঁছায়। যার মাধ্যমে চুলের শিকড় মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে। নিয়মিত
ও পরিমিতভাবে ব্যবহার করলে আপনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন যে এটি আপনার চুলকে ঘন
এবং শক্তিশালী করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, কালোকেশী প্রাকৃতিকভাবে আমাদের চুলের রং বজায় রাখতে
সাহায্য করে। যদি আপনার চুলের রংহীন হওয়ার প্রবণতা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি
কালোকেশী ব্যবহার করতে পারেন।কেননা কালোকেশী ব্যবহারে তা কমিয়ে দিবে এবং
আপনার চুলের প্রাকৃতিক রং এনে দিবে। এটি যে শুধু চুলের প্রাকৃতিক রঙ ধরে
রাখে এমনটি নয়, বরং এটি চুলকে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে।বাজারের
রাসায়নিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে এটি এক ধরনের নিরাপদ সমাধান।
তৃতীয়ত, আমাদের চুলের অন্যান্য যাবতীয় সমস্যা সমাধানে কালোকেশী
অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। মাথার খুশকি দূর করা, চুলে আদ্রতার
যোগান দেওয়া সাথে চুলের রুক্ষতা কমানোর জন্য কালোকেশী এক অন্যরকম
সমাধান। তাই বলা যায় নিয়মিত কালকেশীর ব্যবহার আমাদের চুলের জন্য একটি
পূর্ণাঙ্গ প্রাকৃতিক সমাধান। তাই বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পণ্যের উপর নির্ভর
না করে প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নিতে চাইলে কালকেশীই হতে পারে আপনার নির্ভরযোগ্য
সঙ্গী।
সবশেষে আমাদের মন্তব্য
আমরা ইতোমধ্যে চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার এর যাবতীয় নিয়ম সম্পর্কে
জানলাম। সাথে কালোকেশী কি কি উপকার সাধন করে থাকে সে সবকিছুই আমরা ইতোমধ্যে
এ আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছি। এছাড়াও নিয়মের বাইরে অধিক পরিমাণে কালোকেশী
ব্যবহারের ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কেও অবগত হয়েছি। আপনি
যদি চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার করে উন্নতি করতে চান তবে অবশ্যই
এই আর্টিকেলের নিয়মগুলো মেনে চলুন।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি নিয়মিত এই
ধরনের উপকারী পোস্ট পড়তে চান তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট
করুন। কেননা এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে
থাকে। যেটা আপনার জন্য খুবই কার্যকারী হবে। এছাড়াও আপনার যদি আরও অন্য
কোন বিষয় জানার থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সবশেষে সকলের সুস্থতা
কামনা করছি।
হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url