কোনসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে জেনে নিন
পোষ্ট সূচিপত্রঃ কোনসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে
- কোনসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে
- রক্তে হিমোগ্লোবিন বলতে কী বোঝায়
- হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কেমন হওয়া উচিত
- রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ
- কোন সব ফল খেলে শরীরের রক্ত বাড়ে
- গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিন যেভাবে বাড়ানো উচিত
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবের লক্ষণ
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কার্যকরী ঔষধ সমূহ
- রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর উপায়
- সবশেষে লেখকের কিছু কথা
কোনসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে
কোনসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে বা বাড়ানো সম্ভব? রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শারীরিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা এবং বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।তো চলুন জেনে নিই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য খাদ্য তালিকায় কোন সব খাবার রাখা যেতে পারে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়াতে অধিক কার্যকরী। লেবু, মালটা, পেয়ারা, টমেটো এবং লাল ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।প্রতিনিয়ত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে আয়রনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে অধিক কার্যকরী।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে
থাকে। এইজন্য আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে
আইরন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এ সকল খাদ্যের মধ্যে রয়েছে পালং শাক,
মেথি পাতা, কলিজা, ডিমের কুসুম, লাল মাংস এবং মটরশুঁটি।এ সমস্ত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার
আমাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন
তৈরি করতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন রকমের সবজিঃ বিশেষ করে লাল ফল এবং বিভিন্ন রকমের সবজি আমাদের
রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে অধিক কার্যকরী। গাজর, টমেটো এবং বিটরুট
এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো শরীরের রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।এছাড়াও প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাংস, ডাল ও ডিম হিমোগ্লোবিন তৈরির
প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বলতে কী বোঝায়
আমরা অনেকেই জানি রক্তে হিমোগ্লোবিন আসলে কি। কিন্তু কেউ যদি আমাদের
জিজ্ঞেস করে তাহলে সেটা আমরা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারব না। কি ঠিক বললাম
তো? রক্তে হিমোগ্লোবিন বলতে আসলে কী বোঝায় চলুন সেটা খুব সুন্দর ভাবে
জেনে নিই।
হিমোগ্লোবিন হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রোটিন যেটা আমাদের শরীরের রক্তের লোহিত
কণিকায় উপস্থিত থাকে। যেটাকে আমরা অনেকেই রেড ব্লাড সেল বলে থাকি। এটি
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ
করে। তাহলে নিশ্চয়ই এবার বুঝতে পারছেন যে এই হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের
জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন। এই হিমোগ্লোবিনের কারণেই আমাদের রক্তের রং
লাল। কিন্তু সেটা কিভাবে? চলেন জেনে নিন।
হিমোগ্লোবিনের বিদ্যমান আয়রন অনু অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে রক্তকে লাল রং
প্রদান করে থাকে।শুধু তাই নয়, একই সাথে এটি আমাদের শরীরের
কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হিমোগ্লোবিন
নির্ধারণ করা হয় রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে। যখন আমরা শ্বাস নেই, তখন
ফুসফুস থেকে হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং আমাদের সারা শরীরে এটি পৌঁছে
দেয়। আবার শরীরের বিভিন্ন কোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে এনে
ফুসফুসে জমা করে এবং শ্বাসের মাধ্যমে বাইরে বের করে দেয়।
হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কেমন হওয়া উচিত
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন হলে সেটা স্বাভাবিক ভাবে থাকে? উত্তর হচ্ছে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন রকম হতে পারে।আমরা ইতোমধ্যে প্রায় সকলেই জেনে গেছি যে হিমোগ্লোবিন আমাদের রক্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেটা আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে। তবে আমাদের শরীরে সঠিক মাত্রায় হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে শারীরিক দুর্বলতা দূর করা যায় জেনে নিন খুব সহজেই
পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক মাত্রাঃ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম/ডেসিলিটার। কেননা পুরুষদের শরীরে বেশি পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা থাকে। যার ফলে তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
নারীদের জন্য স্বাভাবিক মাত্রাঃ প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের রক্তে
হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম/ডেসিলিটার হয়ে
থাকে। তবে নারীদের মাসিক চক্র এবং গর্ভাবস্থার কারণে মাঝে মাঝে
হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং
সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের জন্য স্বাভাবিক মাত্রাঃ শিশুদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
১১.০ থেকে ১৬.০ গ্রাম/ডেসিলেটার। এছাড়া যারা নবজাতক তাদের জন্য এটি
তুলনামূলক ১৪.০ থেকে ২৪.০ গ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে
শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য এই মাত্রা বজায় রাখা প্রয়োজন
রয়েছে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাবার কারণ
আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি কোন সব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে। কিন্তু কি
কারনে আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায় সেটা কি আমরা জানি? রক্তে
হিমোগ্লোবিন হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রোটিন যেটা আমাদের অক্সিজেন পরিবহনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেটার ঘাটতি হলে শরীরে দুর্বলতা থেকে বিভিন্ন
রকমের সমস্যা দেখা দেয়। তো চলুন এখন জেনে নিই আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে
যাবার কারণ কি।
- পুষ্টি ও প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেওয়া।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া।
- নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া।
- বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা অথবা অপারেশনের জন্য রক্তক্ষরণ হলে।
- দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যেমন ক্যান্সার, কিডনির সমস্যা, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদির জন্য।
- হিমোগ্লোবিন ধ্বংসকারক কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন ম্যালেরিয়া ও সংক্রমণ।
- কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হিমোগ্লোবিনের ক্ষতি।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বেশ যেমন ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ। যেটা অক্সিজেন পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় এটি সহজে চিহ্নিত করা যায়
না। তবে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া এটি শরীরের জন্য বড় ধরনের সমস্যার কারণ হতে
পারে। তাই আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস
ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মাধ্যমে এ সকল সমস্যা এড়াতে
হবে। যদি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কোন রকমের লক্ষণ দেখা দেয় তবে ডাক্তারের
সাথে তাৎক্ষণিক পরামর্শ করে নেওয়া উত্তম হবে।
কোন সব ফল খেলে শরীরের রক্ত বাড়ে
আমলকিঃ আমলকি এমন এক ধরনের ফল যেটাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি
পাওয়া যায়। যার ফলে এটি আমাদের শরীরের আয়রন শোষণ বাড়ায়। পাশাপাশি
রক্তের উৎপাদন বাড়তে থাকে।
ডালিম অথবা বেদানাঃ ডালিম বা বেদানা ফলটি আয়রনের চমৎকার একটি
উৎস। যেটা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর হয়। সাথে রক্তে
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ি থাকে।
খেজুরঃ খেজুর হচ্ছে সেই ফল যেটা আমাদের শরীরে আয়রন বৃদ্ধির পাশাপাশি
প্রাকৃতিক চিনি হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এটি আমাদের শরীরে রক্ত এবং শক্তি
বৃদ্ধি করে থাকে।
আঙ্গুর ও লেবুঃ আঙ্গুর আমাদের শরীরে পটাশিয়াম সরবরাহ করে
থাকে। পাশাপাশি এটি আমাদের শরীরে দ্রুত রক্ত তৈরি করতে সাহায্য
করে। এছাড়াও লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়ক হিসেবে
কাজ করে।
কলা ও আপেলঃ আয়রনের আরেকটি প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে কলা। এটি
আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে। এইদিকে আপেলে
প্রচুর পরিমাণে আইরন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা রক্তের মান উন্নত করে
থাকে।
গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিন যেভাবে বাড়ানো উচিত
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্যই শরীরে হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরী। কেননা এ সময় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেক বেড়ে
যায়। এর কারণ হলো মায়ের শরীরে রক্তকণিকা তৈরির পাশাপাশি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি
নিশ্চিত করতে রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সেজন্য এ সময় আয়রন যুক্ত খাবার যেমন
পালং শাক, খেজুর, লাল মাংস এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
প্রয়োজন।
এছাড়াও সঠিক খাদ্যাভাসার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট
খাওয়া যেতে পারে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
উচিত। পাশাপাশি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা উচিত যেটা রক্ত চলাচলে উন্নতি
করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উত্তম। কেননা এটার দ্বারা হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় রক্তে কিভাবে হিমোগ্লোবিন বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে
পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করা হলো।
- আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ব্রকলি, ডালিম, খেজুর ও লাল মাংস খাওয়া।
- কমলালেবু, আমলকি ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া।
- ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, সিম ইত্যাদি এগুলো খাওয়া।
- ক্যাফেইন যুক্ত খাবার অর্থাৎ চা কফি ইত্যাদি কম পান করা।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা।
- হাঁটাচলা অথবা হালকা যোগ ব্যায়াম করা। এটি রক্ত চলাচলের উন্নত করে থাকে।
- শরীর স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম অথবা ঘুমানো।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিন পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবের লক্ষণ
কোন সব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে সে সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। হিমোগ্লোবিন হলো এমন এক ধরনের প্রোটিন যেটি আমাদের রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। তবে এর ঘাটতি পড়লে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিন অভাবের লক্ষণ প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট নাও হতে পারে। তবে এর অভাবের লক্ষণ সাধারণভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে।
প্রথম ধাপে বলা যায়, হিমোগ্লোবিনের অভাবের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল শারীরিক
ক্লান্তি ও দুর্বলতা।কেননা শরীরেই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন অংশে
অক্সিজেনের সরবরাহ কম হয়। যার ফলে শারীরিক শক্তি কমে যায়।এছাড়াও
শরীরের রক্তস্বল্পতার কারণে সামান্য পরিশ্রমে অথবা হাঁটার সময় শ্বাস নিতে কষ্ট
হয়। হিমোগ্লোবিন অভাবের আরো কিছু লক্ষণ আছে । আপনার সুবিধার্থে নিচে
সেগুলো পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করলাম।
- সামান্য পরিশ্রমে অধিক পরিমাণে শারীরিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দেওয়া।
- শরীরের ত্বকে অস্বাভাবিকভাবে ফ্যাকাসে ভাব দেখা দেওয়া।
- শরীরের রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হাত পা ঠান্ডা থাকা।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা। হালকা পরিশ্রম অথবা হাঁটাহাঁটি করার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
- কিছুক্ষণ বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘোরা।
- মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে মাথাব্যথা হওয়া।
- আয়রনের অভাবে হাত পায়ের নখ দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়া।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কার্যকরী ঔষধ সমূহ
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য কোন সব শাকসবজি এবং ফল খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে
ইতোমধ্যে আমরা জেনে গেছি।তবে আপনি চাইলে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন।রক্তস্বল্পতা দূর
করতে এবং হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কিছু ওষুধের তালিকা আমরা দিয়ে
দিচ্ছি। যেগুলো সেবনে আপনার শরীরে রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ এবং
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে অধিক কার্যকরী হবে।
আয়রন সাপ্লিমেন্টসঃ
- Ferrous sulfate
- Ferrous Gluconate
- Ferrous Fumarate
এই তিন ধরনের আয়রন সাপ্লিমেন্ট সরাসরি হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করে
থাকে। সাধারণত রক্তস্বল্পতা চিকিৎসায় এইসব সাপ্লিমেন্ট গুলো ব্যবহৃত
হয়।
ফোলিক এসিড ও ভিটামিন সি ট্যাবলেটঃ ফলিক এসিড এমন একটি উপাদান যেটা
আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি
আয়রনের সাথে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ভিটামিন সি ট্যাবলেট আয়রনের শোষণ বাড়িয়ে
থাকে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
আয়রন ইনজেকশন ও ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্টঃ যাদের খাবার এবং
ওষুধের মাধ্যমে আয়রন শোষণের সমস্যা দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে আয়রন ইনজেকশন
প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও যাদের ভিটামিন বি ১২ অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা
রয়েছে তাদের জন্য এটি বিশেষ কার্যকরী। মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ ঔষধ
যেমন Zincovit , এটি এ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
এ সমস্ত ঔষধ আপনি হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য সেবন করতে পারবেন। তবে
ঔষধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম
হবে। সঠিক ডোজ এবং নির্দেশনা মেনে ঔষধ সেবন করুন। তবে
আপনার উচিত হবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাত্রার
পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে হিমোগ্লোবিন বাড়ানো।
রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর উপায়
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেঃ গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ফলে
আমাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
যেমন ডিপ ব্রিদিং এবং যোগব্যায়াম করার ফলে আমাদের ফুসফুসে অধিক পরিমাণে
অক্সিজেন প্রবেশ করে।পাশাপাশি এটি আমাদের ফুসফুসের সঞ্চালন বাড়িয়ে
থাকে। তাই আমাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য গভীরভাবে
শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে যে ১০ টি উপকার পাবেন
খাদ্যাভ্যাস এর মাধ্যমেঃ রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য
পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া অপরিহার্য।বিভিন্ন রকমের আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক,
ব্রকলি এবং লাল মাংস ইত্যাদি আমাদের রক্তে অক্সিজেনের ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে
থাকে। এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের অক্সিজেন গ্রহণ
প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। তবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে হলে আরেকটি
কাজ করা অতীব জরুরী। সেটা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। যেটা
আমাদের শরীরকে তরল রেখে অক্সিজেন সঞ্চালন সহজে করাতে সাহায্য করে।
সবশেষে লেখকের কিছু কথা
আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে কোন সব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা খুব সুন্দরভাবে করেছি। এছাড়াও কোন ফল খেলে শরীরে রক্ত
বাড়ে, হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কোন ঔষধ খাওয়া যেতে পারে, গর্ভাবস্থায়
শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খুব
সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছি। আপনি যদি রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে চান তবে এই
আর্টিকেলে আলোচিত বিষয়বস্তু আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
এতক্ষণ আমাদের এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক বেশি কার্যকরী হবে। আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। তাই এই ধরনের উপকারী আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। সবশেষে আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url