চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকারী পদ্ধতি জেনে নিন


আপনি কি চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা চুল আমাদের শরীরে এমন এক ধরনের অংশ যেটা আমাদের প্রায় সকলের সৌন্দর্য বহন করে থাকে। যার জন্য নিয়মিত এটির যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 
চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকারী পদ্ধতি
কিন্তু ঘরোয়া চুলের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে। যা আপনার চুলের স্বাস্থ্য অনেক বেশি ভালো করবে। তো চলুন ঘরোয়া ভাবে চুলের যত্নে কার্যকরী পদ্ধতি গুলো জেনে নেওয়া যাক। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে ঘরোয়া কিছু কার্যকর পদ্ধতি

চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকারী পদ্ধতি 

চুল আমাদের শরীরের এমন একটি অংশ যে আমরা চুলের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখার জন্য কত কিছুই না করি।কিন্তু চুলের যত্নে ঘরোয়া যে কার্যকরী পদ্ধতি গুলো আছে সেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নেই। চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ নিরাপদ এবং কার্যকরী। দৈনন্দিন চুলের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি, শক্তি ও উজ্জ্বলতা নিশ্চিত করা যায়। তো চলুন এবার জেনে নিই চুলের যত্নে ঘরোয়া দশটি কার্যকরী পদ্ধতি সম্পর্কে। 

১। নারিকেলের তেল ব্যবহারঃ চুলের যত্নে নারিকেলের তেল ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকরী। কেননা এই তেল চুলে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। তাই সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন হালকা গরম নারিকেলের তেল চুলে দেওয়ার ফলে চুলের স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। 

২। ডিমের হেয়ার প্যাকঃ যত্নে মাথায় কাচা ডিম ব্যবহার করা উচিত। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও বায়োটিন রয়েছে। যা চুলের বৃদ্ধিতে অধিক সহায়ক। সেজন্য একটি ডিমের সাথে অলিভ অয়েল তেল মাথায় লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতেই কাজ হয়ে যাবে। 

৩। পেঁয়াজের রস ব্যবহারঃ পেঁয়াজের রসে একপ্রকার সালফার থেকে থাকে যা আমাদের নতুন চুল গজাতে অনেক কার্যকরী। এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন, পেঁয়াজের রস তৈরি করে সেটা মাথায় লাগিয়ে কমপক্ষে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপরে আপনি সেটা ধুয়ে ফেলুন। 

৪। মেথি বীজের ব্যবহারঃ চুলে মেথি ব্যবহার করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি চুলে ব্যবহারের ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত এবং মজবুত হয়ে থাকে। সে জন্য আমাদের করণীয় হলো মেথিদের কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটার পেস্ট তৈরি করে তুলে লাগাতে হবে।

৫। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারঃ অ্যালোভেরা এক ধরনের প্রাকৃতিক ময়েশচারাইজ হিসেবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের উপকার সাধন করে থাকে। তবে অ্যালোভেরা জেল চুলের ক্ষেত্রেও অধিক কার্যকরী। কেননা এটি চুলকে নরম ও ঝলমলে করে। সেক্ষেত্রে মাথার ত্বকে এবং তুলে সরাসরি অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। 

৬। আমলকি ব্যবহারঃ আমলকি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এমন একটি ফল যা আমাদের চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি চুলকে কালো ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। যা আমাদের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী।সেক্ষেত্রে আপনি আমলার রস বা এর গুঁড়া হেয়ার প্যাকে ব্যবহার করতে পারেন। 

৭। গ্রীন টি রিন্সঃ গ্রিন টি অর্থাৎ সবুজ চা। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক। শুধু চুলের বৃদ্ধি নয় পাশাপাশি এটি আমাদের মাথার ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে এর ব্যবহারবিধি হলো, গ্রিন টি ঠান্ডা করে চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন। 

৮। নিয়মিত ব্রাশ এবং পরিষ্কারঃ চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে মৃদু চুলে ব্রাশ ব্যবহার করুন এবং সপ্তাহে ২-৩ বার মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এটি চুলকে পরিষ্কার রাখতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

৯। দই এর ব্যবহারঃ দই আমাদের চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই চুলের যত্নে দই এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দই আমাদের চুলকে মসৃণ করে এবং মাথাকে হাইড্রেট করে রাখতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে দই সরাসরি চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। 

১০। মধু ও অলিভ অয়েলঃ চুলে মধু ব্যবহার করা এই জন্যই উত্তম কারণ মধু আমাদের চুলের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে থাকে। আর অলিভ অয়েল ব্যবহারে আমাদের চুল নরম থাকে। ক্ষেত্রে এই দুটি একসাথে মিশ্রণ করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। 

প্রতিদিন যেভাবে চুলের যত্ন নেওয়া উচিত

চুলের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন নিয়মিত কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। কেননা এ অভ্যাস গড়ে তোলার ফলে আমাদের চুলের স্বাস্থ্য অধিক পরিমাণে ভালো করা সম্ভব। ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চুল ভালোভাবে আঁচড়ানো উচিত। এতে করে আমাদের চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। যা আমাদের জন্য অধিক কার্যকরী। এছাড়াও আমাদের চুলের ধরন একেকজনের একেকরকম। আর সেই ধরন অনুযায়ী ব্রাশ বা চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। 

চুলের যত্নে দিনের শুরুতে অথবা শেষে হালকা তেল অথবা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা উত্তম।কেননা এটি ব্যবহারে আপনার চুল মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আমরা অনেকেই চুল পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতিদিন চুল ধুয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিদিন আপনার চুল ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তুলে যদি ময়লা অথবা ত্বকের তেল জমে সেক্ষেত্রে আপনি চুলে শ্যাম্পু করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত ২-৩দিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল পরিষ্কার থাকবে। 

এছাড়া আরো কিছু উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে চুলের যত্ন নিশ্চিত করা যায়। আপনার বোঝার সুবিধার্থে নিচের সেগুলো পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলো। 
  1. প্রতিদিন সকালে ও রাতে চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। 
  2. বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পণ্য কম ব্যবহার করুন। 
  3. নিয়মিত চুলে প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 
  4. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। 
  5. রোদে বের হলে অবশ্যই চুল ঢেকে রাখবেন। 
  6. স্ট্রেস এড়াতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন। 
  7. অতিরিক্ত গরম পানিতে চুল ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। 

চুলের যত্নে ব্যবহৃত উপাদান গুলো যেভাবে সংগ্রহ করা যায়

আমরা প্রায় সকলেই আমাদের চুলের যত্নের জন্য অনেক কিছু করে থাকি। তবে আমরা ইতোমধ্যে চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকরী পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে ফেলেছি। কিন্তু এরপরেও আমরা আমাদের চুলে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করতে চায় যেগুলো সংগ্রহ করা আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে যায়। কেননা এগুলো সহজে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না আমাদের জন্য। তো চলুন জেনে নিই চুলের যত্নে ব্যাবহার করা উপাদানগুলো কিভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব। 

শুরুতেই আপনাদের যেটা করণীয় সেটা হলো, যেসব উপাদান হোমমেড হেয়ার প্যাক তৈরির জন্য প্রয়োজন হয়, সেইগুলো সংগ্রহ করার সময় বিশেষ যত্ন নিতে হবে। শুকনো উপাদান যেমন মেথি বা রিঠা এগুলো সব সময়ের জন্য একটি বাইরোধী পাত্রে রাখতে হবে। এছাড়াও যেসব তাজা উপাদান রয়েছে যেমন পেঁয়াজ অথবা আমলকি এগুলো ব্যবহার করতে দেরি হলে ফ্রিজে রেখে দিন। এতে করে এসব উপাদানের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে আপনার চুলের যত্নে সেরা ফল দেয়।

চুলের যত্নে ব্যবহৃত উপাদানের তালিকা এবং সংগ্রহের উপায়

নারিকেলের তেলঃ এটি আপনি নিকটস্থ দোকান অথবা বাজার থেকে কিনতে পারেন। তবে কেনার সময় অবশ্যই এর গুণগত মান দেখে কিনবেন। 

মধুঃ যদি সম্ভব হয় তবে এটি আপনি সরাসরি মৌয়ালের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এটি সুপার শপ থেকে নিতে পারেন। তবে কেনার সময় এর মান দেখে কিনা উচিত হবে। 

ডিমঃ ডিম আপনি স্থানীয় বাজার অথবা নিকটস্থ দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। 

মেথি বীজঃ স্থানীয় মসলার দোকানে খোঁজ করুন। যদি না পান তাহলে বাজারে গিয়ে বিভিন্ন রকমের বীজ যেমন চিয়া সিড এসবের দোকান অথবা মসলার দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
 
অ্যালোভেরা পাতাঃ এটি আপনার বাসা বাড়ির ছাদে চাষ করতে পারেন। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ফলের দোকানে খোঁজ করলে এটি পেয়ে যাবেন। 

আমলকীঃ আপনি চাইলে গাছ থেকে এটি সংগ্রহ করতে পারেন। যদি এটা সম্ভব না হয় তাহলে বাজারে গেলেই বিভিন্ন রকমের টাটকা আমলকি পেয়ে যাবেন। 

সিকাকাই এবং রিঠাঃ এটি স্থানীয় আয়ুর্বেদিক দোকান অথবা বাজারের আয়ুর্বেদিক দোকানে পেয়ে যাবেন। 

পেঁয়াজ ও লেবুঃ এগুলো আপনি আপনার বাসা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করতে পারেন যদি গাছ থেকে থাকে। আর যদি না থাকে তবে বাজারে গেলেই এসব পেয়ে যাবেন। 

গ্রিন টিঃ সুপার শপ অথবা চায়ের দোকান থেকে এটি সংগ্রহ করতে পারেন। 

চুলের যত্নের জন্য বিশেষ টিপস

চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকারী পদ্ধতি
প্রাকৃতিক উপাদানের যত্ন ছাড়াও চুলের জন্য আরো বিশেষ কিছু যত্ন রয়েছে। যেগুলো করতে পারলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকরী পদ্ধতি জানার পরেও চুলের জন্য আরও বিশেষ কিছু টিপস জানা আমাদের প্রয়োজন। তো চলুন আর বেশি দেরি না করে জেনে ফেলি চুলের যত্নে কার্যকর টিপসগুলো। 

প্রথমত চুলের যত্নে আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। কেননা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাবার ফলে আমাদের চুল অনেকটা মজবুত এবং শক্তিশালী হয়। যার জন্য নিয়মিত আমাদের এসব প্রোটিনযুক্ত এবং আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তবে অতিরিক্ত রাসায়নিক পণ্য এবং গরম স্টাইলিং আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা এসবের ফলে চুলের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে শ্যাম্পু অথবা কন্ডিশনার ব্যবহার করা ঠিক নয়। আমাদের চুলের ধরন অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করা উচিত। এতে করে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা সম্ভব। পাশাপাশি বাড়ির বাইরে বের হলে ধুলোবালে এড়াতে অবশ্যই চুল ঢেকে রাখা উত্তম হবে। যদি এসব কিছু অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন তবে এগুলো আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এবং ভালো ফলাফল দেবে। 

যেসকল খাবার গ্রহণে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে

আমাদের চুলের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য ধরে রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা চুলের যাবতীয় সমস্যা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করার কারণে হয়ে থাকে। সেই জন্য আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য ভাষায় এমন কিছু খাবার যোগ করা উচিত যেগুলো আমাদের চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়, চুলকে ঘন এবং মজবুত করে পাশাপাশি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়ক হয়। বিশেষ করে প্রোটিন, মিনারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করার ফলে চুল থাকবে ঝলমলে এবং স্বাস্থ্যকর। 

আমাদের চুলের গুণগত মান ভালো রাখার জন্য প্রথমত ডায়েটের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। কেননা চুলের মূল উপাদান হলো ক্যারাটির নামক প্রোটিন। যেটা আমাদের শরীরে সঠিক পুষ্টি তৈরি করে থাকে। আর চুল যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি না পায় তাহলে রুক্ষ হয়ে যেতে পারে এবং ঝরে পড়া প্রবণতা অনেক বেশি। তাহলে চলুন এবার জেনে নিই কোন সব পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার ফলে চুলের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখা সম্ভব। 
  1. অত্যাধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম আমাদের চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে এবং নতুন চুল গজাতে অধিক কার্যকরী।
  2. ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ফ্যাটি ফিস। যা চুলকে ঝলমলে রাখে এবং আদ্রতা থেকে রক্ষা করে।
  3. বিভিন্ন রকমের বাদাম এবং সিয়া সিড এ ভিটামিন ই এবং জিংক রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুল পড়া বন্ধতে অধিক সহায়ক। 
  4. বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন পালং শাক ব্রকলি ইত্যাদি স্ক্যাল্পে প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন বজায় রাখতে কার্যকরী। 
  5. ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু চুলকে মসৃণ এবং মজবুতর রাখতে সহায়তা করে। 
  6. গাজরে বিদ্যমান ভিটামিন চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। 
  7. অত্যন্ত প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ ডাল এবং সিমের বীজ চুলের ভঙ্গরতা কমাতে সাহায্য করে থাকে। 
  8. প্রোটিন সমৃদ্ধ দই এবং দুগ্ধজাত খাবার চুলের ক্ষয় রোধে বিশেষ উপকারী। 

চুলের জন্য যেসব তেল ব্যবহার করা কার্যকরী

চুলের যত্নে ঘরোয়া দশটি কার্যকরী পদ্ধতি আমরা সকলেই ইতোমধ্যে জেনে গেছি। তবে এখন আমরা জানবো চুলের স্বাস্থ্য খুব সুন্দর ভাবে ধরে রাখার জন্য কোন সব তেল ব্যবহার করা উচিত। আমরা প্রায় সকলেই জানি চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য তেলের ভূমিকা অপরিসীম। আর তাই বাসা বাড়িতে আমরা বিভিন্ন রকমের তেল ব্যবহার করে থাকি তাই না? কিন্তু চুলে ভালো স্বাস্থ্যের জন্য কোন সব তেল ব্যবহার করা উচিত সে সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে জানি না। তো চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে জেনে ফেলে চুলের জন্য কোন সব তেল ব্যবহার করা অধিকার কার্যকরী। 

তবে একটা কথা আপনার জানা প্রয়োজন। আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী তেল ব্যবহার করা উচিত।চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা, ডগা ফাটা ইত্যাদির জন্য প্রাকৃতিক তেল গুলো ব্যবহার করা কার্যকরী।নিচে কিছু সেরা তেলের তালিকা দেওয়া হল যা চুলের পরিচর্যার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। 

নারিকেল তেলঃ তেলটা সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। কেননা এখন প্রায় অনেকেই এই তেলটি ব্যবহার করে থাকে। এই তেলটি আমাদের চুলের গভীরে প্রবেশ করে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুলকে মজবুত করে। 

অলিভ অয়েলঃ নামের মধ্যেই কেমন জানি একটি দামি দামি ভাব। যার জন্য অনেকেই এটি ব্যবহার করতে পারেনা। তবে দামের দিক দিয়ে এটি বেশি হলেও গুণের দিক দিয়েও এটি অনেক বেশি কার্যকরী। কেননা এই তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ও ই। যেটা আমাদের চুলের প্রাকৃতিক আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। 

অ্যামন্ড তেলঃ এটি এমন একটি তেল যাতে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান। এই তেল ব্যবহারের ফলে চুল উজ্জ্বল এবং মসৃণ হয়। বিশেষ করে এটি শুষ্ক তেলের জন্য অধিক কার্যকরী। 

তিলের তেলঃ সাধারণত তিলের তেল বলতে আমরা সেই তেলকেই বুঝি যেটা তিন থেকে তৈরি হয়েছে।এই তেলটি ব্যবহার করার ফলে আমাদের স্ক্যাল্প ঠান্ডা থাকে। পাশাপাশি এটি চুলের ক্ষতিরোধ করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কার্যকরী। 

আরগান অয়েলঃ আরগান অয়েল মূলত "লিকুইড গোল্ড" নামে পরিচিত। কেননা এটি ব্যবহারে চুলের শুষ্কতা এবং চুলের যাবতীয় ক্ষতি দূরীভূত হয়। সাথে এটি ফ্রিজি চুল মসৃণ করে থাকে। 

অ্যাভোকাডো ওয়েলঃ অ্যাভোকাডো ওয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিতামিন  ই ও ফ্যাটি এসিড থাকে।যেটা আমাদের চুলের গভীরে কন্ডিশনিংয়ে সহায়ক। 

মাথা থেকে খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায়

মাথার ত্বকের জন্য খুশকি একটি সাধারন সমস্যা হলেও এটি খুবই অস্বস্তিকর। কেননা যে এর মুখোমুখি হয়েছে শুধু সেই জানে। আপনিও কখনো না কখনো এই খুশকির সম্মুখীন হয়েছেন। কি, ঠিক বললাম তো? কিন্তু এটা কিসের জন্য হয় চলুন জেনে নেই। খুশকি মূলত ত্বকের শুষ্কতা এবং ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। যা আমাদের জনজীবনকে অস্বস্তিকর করে তোলে।শুধু তাই নয় এটি আমাদের চুলের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে এবং চুল পড়ার এক অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তো চলুন জেনে নেই এই অস্বস্তিকার খুশকি কিভাবে দূর করা যায়। 

শ্যাম্পুর সঠিক ব্যবহারঃ খুশকির জন্য বিশেষ মেডিকেটেড যেমন সালফার এবং জিংক মিশ্রিত শ্যাম্পু ব্যবহার করা প্রয়োজন।এতে করে মাথা থেকে খুশকি সমস্যা দূরীভূত হয়।এটি আপনাকে সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। 

যোগব্যায়াম ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণঃ আপনি কি জানেন মানসিক চাপ খুশকির সমস্যা বাড়াতে পারে? হ্যাঁ, মানসিক চাপের ফলেও কষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। কেননা এতে করে মাথায় অনেক চাপ পড়ে এবং এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন করুন। 

অ্যাপল সিডার ভিনেগারঃ এটি ব্যবহারে আমাদের মাথার ত্বক পিএইচ লেভেল নিয়ন্ত্রিত হয় সাথে ছত্রাক দূরীভূত হয়। এটির ব্যবহার বিধি হলো পানির সাথে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান এবং কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন। 

নারিকেল তেল ও মধুর মিশ্রণঃ চুলের খুশকি দূর করার জন্য নারিকেল তেল ও মধুর মিশ্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি স্ক্যাল্পে পুষ্টির যোগান দেয় পাশাপাশি খুশকি দূর করে। নারিকেল তেল ও মধুর মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে কমপক্ষে ৩০ মিনিট রাখার পরে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

লেবুর রসঃ লেবুর রসের ভিটামিন সি থাকে এটা আমরা সবাই জানি। তবে লেবুর রসের অন্যতম প্রধান হলো এটি মাথায় ব্যবহারের ফলে ছত্রাক ধ্বংস করে থাকে। যার ফলে খুশকি ও দূর হয়। মাথায় সরাসরি লেবুর রস লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পরে ধুয়ে ফেলুন। 

অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারঃ অ্যালোভেরার জেলে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা বজায় রেখে খুশকি হতে বাধা সৃষ্টি করে। সেজন্য মাথার স্ক্যাল্পে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা উচিত। 

অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার টেকনিক

মাথা থেকে চুল ঝরে পড়া এটা আমাদের নিত্যদিনের কোন সমস্যা নয়। প্রতিনিয়তই আমাদের মাথা থেকে চুল পড়তে থাকে।কি ঠিক বললাম তো? যদিও চুল পড়ে একটি সাধারণ সমস্যা তবে এটি অতিরিক্ত হয়ে গেলে আমাদের মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত চুল পড়ার কারণ হিসেবে জিনগত কারণ, মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা অন্যতম ভূমিকা পালন করে। তবে সঠিক যত্ন নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করার মাধ্যমে চুল পড়ার সমস্যা দূর করা সম্ভব। তো চলুন জেনে নিই কিভাবে চুল পড়ার সমস্যা দূর করা সম্ভব। 
  1. সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন। নিয়মিত ভিটামিন, প্রোটিন, জাতীয় খাবার যেমন ডিম, মাছ, শাকসবজি, ফলমূল ও বাদাম জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 
  2. চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত উপকারী তেলগুলো ব্যবহার করুন। এতে করে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে। 
  3. অতিরিক্ত গরম এবং কেমিক্যাল এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে হেয়ার ড্রায়ার কম ব্যবহার করুন।সাথে কেমিক্যাল এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন। 
  4. মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করুন। 
  5. চুলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায় যা চুল পড়ার একটি কারণ হয়ে দাড়ায়। 
  6. চুল ভেজা অবস্থায় আচড়ানো থেকে বিরত থাকুন। কেননা ভেজা চুল দুর্বল থাকার কারণে এটা আচরণের সাথে সাথে উঠে যায়। 
  7. চুল পরিষ্কার রাখুন এবং নিয়মিত ব্যবহৃত চিরুনি বা তোয়ালে এগুলো পরিষ্কার রাখুন। 
  8. চুল পড়া যদি অত্যাধিক হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। প্রয়োজন পড়লে বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। 

চুলের রুক্ষতা যেভাবে দূর করা যায়

চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকারী পদ্ধতি
চুলের রুক্ষতার জন্য এবং কিভাবে এই রুক্ষতা দূর করা যায় তার জন্য আমরা অনেকেই বিভিন্নভাবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।চুলের রুক্ষতার প্রধান কারণ হলো ময়েশ্চারাইজের অভাব। সেক্ষেত্রে চুলের এই রুক্ষতা দূর করতে প্রথমেই আপনার প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা এবং নিয়মিত তেল ব্যবহার করা। বিশেষ করে সপ্তাহে অন্তত দুইবার অলিভ অয়েল এবং নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন। কেননা তেল আপনার চুলের গভীরে গিয়ে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে এবং রুক্ষতা দূর করে। 

এছাড়াও চুলের রুক্ষতা দূর করতে চুল ধোয়ার সময় কোমল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। কোমল শ্যাম্পু বলতে সালফেট এবং প্যারাবেন মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। কেননা কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু চুলের রুক্ষতার অন্যতম প্রধান কারণ। তবে অবশ্যই চুল ধোয়ার পরে কন্ডিশনাল ব্যবহার করা উত্তম কেননা এতে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে। সপ্তাহে অন্তত একবার চুলে প্রোটিন প্যাক এবং ঘরোয়া পদ্ধতি তৈরি মার্ক ব্যবহার করা উচিত। কারণ এতে করে চুল অনেক বেশি মসৃণ হয়ে থাকে। 

সবশেষে চুলের রুক্ষতা দূর করতে এবং স্বাস্থ্য ভালো করতে পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা অনেক বেশি। কেননা সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে চুল অনেক বেশি হাইড্রেট থাকে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ই ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে আমাদের চুলকে মজবুত ও কোমল করে তোলে। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলার ফলেও চুলের রক্ষতা অনেক দূর হয়ে থাকে। এছাড়াও নিয়মিত চুল কাটার ফলেও রুক্ষতা দূর করা সম্ভব। 

আমাদের শেষ কিছু কথা

আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি চুলের যত্নে ঘরোয়া ১০ টি কার্যকরী পদ্ধতি সম্পর্কে। এছাড়াও কিভাবে চুলের যত্ন নেওয়া উচিত, চুলের জন্য কোন সব তেল অধিক কার্যকরী, চুল পড়া বন্ধ করা ও কিভাবে খুশকি দূর করা যায় এ সমস্ত বিষয় ছাড়া আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছি। আপনি যদি আপনার চুল সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করে সুন্দর এবং মসৃণ করতে চান তবে বিষয়গুলো আপনার জন্য অত্যন্ত কার্যকারী। 

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের লাইফ স্টাইল বিষয়ক আর্টিকেলগুলো পড়তে চান তবে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।কেননা আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে থাকে।সবশেষে আপনার সুস্থতা কামনা করছি। 










এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

হ্যাপিনেস ভ্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url